ই-কমার্স e-commerce কি

ই-কমার্স e-commerce কি, কেন ও এটি কিভাবে কাজ করে

ই-কমার্স e-commerce হচ্ছে ইন্টারনেট ব্যবহার করে করা ব্যবসা পদ্ধতি।  বর্তমান সময়ে ই-কমার্স e-commerce র জনপ্রিয়তা ও প্রসার সবচেয়ে বেশি হয়েছে।  বিশেষত করোনাকালীন এই সময়ে এটি আরো ব্যাপকতা লাভ করেছে। ই-কমার্স e-commerce একটি আধুনিক ব্যবসা পদ্ধতি । এক্ষেত্রে অনলাইনের সাহায্যে সকল প্রকার  ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এর ফলে ইন্টারনেট ব্যবহার করে ক্রেতা অতি সহজে ঘরে বসে যেকোনাে পণ্যের মান ও দাম কেমন সেটা যেমন দেখতে পারে তেমনি তা অর্ডার ও দিতে পারে সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটের মাধ্যমে। ই-কমার্স e-commerce  লেনদেনের ক্ষেত্রে সাধারণত ক্রেডিট কার্ড ও ডেবিট কার্ড

ব্যবহার করা হয়। তবে বর্তমানে দেশীয় অনেক পেমেন্ট পদ্ধতি ও ব্যবহার করা হচ্ছে যেমন: নগদ, বিকাশ, রকেট,  উপায় ইত্যাদি। 

লেনদেনের দুটি পক্ষের প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে

ই-কমার্স e-commerceকে চার ভাগে ভাগ করা যায়

১। ব্যবসা হতে ভোক্তা (B2C);u003cbru003e২। ব্যবসা হতে ব্যবসা (B2B);u003cbru003e৩। ভােক্তা হতে ব্যবসা ( C2B); u003cbru003e৪। ভোক্তা হতে ভোক্তা (C2C);

এবার আসুন সংক্ষেপে জেনে নেই এই চার প্রকারের বিশদ বিবরণ-

১। ব্যবসা হতে ভােক্তা ( B2C):

এই পদ্ধতির মাধ্যমে কোনাে ভােক্তা সরাসরি কোনাে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বা উৎপাদনকারীর নিকট থেকে যেকোনো পণ্য ক্রয় করতে পারে। ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহার করে কোনাে ব্যক্তি যদি অগ্রিম হােটেল বুকিং দেয় তাহলে সেটা এ জাতীয় লেনদেনের আওতায় পড়ে । উদাহরণ : walmart.com

২। ব্যবসা হতে ব্যবসা (B2B) :

এইক্ষেত্রে একাধিক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের নিজেদের মধ্যে ব্যবসায়িক লেনদেন ও আদান-প্রদান করা হয়। এক্ষেত্রে সাধারণত দুটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ভোক্তাদের কাছে পণ্য বিক্রির পূর্বে তাদের নিজেদের মধ্যে পাইকারী কেনা-বেচা করে।

See also  ব্লগ তৈরি করার নিয়ম ২০২২ | খুব সহজেই ব্লগ তৈরি করুন

উদাহরণ : e-steel.com এমন একটি ওয়েব সাইট ।

৩। ভােক্তা হতে ব্যবসা বা  (C2B):

যে সিস্টেমে কোনো পণ্য ভোক্তার নিকট হতে ব্যবসায়ীরা সরাসরি গ্রহণ করে থাকে তাকে ভোক্তা হতে ব্যবসা বা  C2B বলা হয়

উদাহরণ : www.priceline.com এমন একটি ওয়েবসাইট ।

৪। ভােক্তা হতে ভােক্তা বা  (C2C):

সচরাচর ব্যাবসার ক্ষেত্রে যেমন মধ্যসত্বভোগী বা মিডলম্যান থাকে। এই ব্যাবসা পদ্ধতিতে কোনাে বিজনেস মিডলম্যান থাকে না। এক্ষেত্রে সাধারণত ভোক্তাদের নিজেদের মধ্যে ব্যবসায়িক লেনদেন ও আদানপ্রদান সম্পাদিত হয়। যার ফলে এক ভােক্তার পণ্য সরাসরি অন্য কোনাে ভােক্তা ক্রয় করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে যদি কোনাে কৃষক তার উৎপাদিত পণ্য সরাসরি ভােক্তার কাছে যদি বিক্রি করেন তাহলে সেটা C2C এর আওতায় পড়বে। উদাহরণ : bikroy.com এমন একটি সাইট যেখানে

কোনাে ক্রেতা অন্য কোনাে ক্রেতার কাছে তার পণ্যটি বিক্রি করে থাকে।

ই-কমার্স e-commerce এর বৈশিষ্ট্য-

ই-কমার্স e-commerce টেকনােলজি সাতটি বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত, বৈশিষ্ট্যগুলাে হলাে-

১। সর্বব্যাপিতা

২। সব জায়গায় প্রবেশযােগ্য 

৩। আন্তর্জাতিক মান 

৪। প্রাচুর্যতা 

৫। মিথস্ক্রিয়া

৬। তথ্যের ঘনত্ব ও

৭। ব্যক্তিগতভাবে যত্নশীলতা

সর্বব্যাপিতা: গতানুগতিক ব্যবসার ক্ষেত্রে মার্কেট হলাে একটি নির্দিষ্ট জায়গা যেখানে পন্য কেনা-

বেচা করা হয়। কিন্তু ই-কমার্স e-commerce এ এরকম কোনো নির্দিষ্ট জায়গার প্রয়ােজন নেই। এটি হলাে সর্বব্যাপী অর্থাৎ এটি সবসময় সবজায়গায় সহজলভ্য। মােবাইল, ল্যাপটপ কিংবা অন্য কোনাে ডিভাইসে ইন্টারনেট সংযােগ থাকলে যেকোনাে জায়গায় বসে যেকোনো সময় যেকোনো দ্রব্য কেনা-বেচা করা যায় । ই-কমার্স e-commerce কোনাে নির্দিষ্ট সীমারেখা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না।

সব জায়গায় প্রবেশযােগ্য: ই-কমার্স e-commerce এর ক্ষেত্রে গতানুগতিক ব্যবসা পদ্ধতির মতো নির্দিষ্ট কোনাে সীমারেখা বা জায়গা নেই। ইন্টারনেট ব্যবহার করার মাধ্যমে সমগ্র পৃথিবীর যেকোনো স্থান হতে যে কেউ যেকোনো সময়ে এই ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত হতে পারে  এবং পন্য কেনা-বেচা করতে পারেন ও অর্ডার দিতে পারেন। প্রকৃতপক্ষে সমগ্র বিশ্বের যত লােক ইন্টারনেট ব্যবহার করে তাদের সবাইকেই ই-কমার্স e-commerce র বাজার হিসাবে ধরা যায়।

See also  ব্লগ তৈরি করার নিয়ম ২০২২ | খুব সহজেই ব্লগ তৈরি করুন

আন্তর্জাতিক মান: ই-কমার্স e-commerce সবসময় একটি নির্দিষ্ট টেকনিক্যাল মানদণ্ড মেনে চলে, একে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বলা হয়। যার ফলে এটি সব দেশে সব জাতি দ্বারা স্বীকৃত ব্যবসা পদ্ধতি। পক্ষান্তরে গতানুগতিক ধারার ব্যবসার মান এলাকা থেকে এলাকা বা দেশ থেকে দেশ ভেদে পরিবর্তিত হয়।

প্রাচুর্যতা:  ব্যবসার গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হলাে পন্যের বিজ্ঞাপন। এজন্য ই-কমার্স e-commerceের ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের সাহায্যে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কোনাে পন্যের স্থিরচিত্র, ভিডিও বা এ্যানিমেশনের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেয়া হয়। যার ফলে পণ্যটির প্রচার ও প্রসার ঘটে। এবং বিক্রয়যোগ্যতা বাড়ে।

মিথস্ক্রিয়া:  ই-কমার্স e-commerce টেকনােলজি হলাে মিথস্ক্রিয় যুক্ত যোগাযােগ । কারণ এটি বিভিন্ন ধরনের যােগাযােগ রক্ষা করে। এর মাধ্যমে ভোক্তা ও ব্যবসায়ীর মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ করার সুবিধা থাকে। পক্ষান্তরে গতানুগতিক টেকনােলজি ; যেমন- টেলিভিশনের সাহায্যে শুধুমাত্র একমুখি যােগাযােগ সম্ভব। কিন্তু ই-কমার্স e-commerce টেকনােলজিতে সকল ধরনের যোগাযোগ সম্ভব।

তথ্যের ঘনত্ব: এই ব্যবসা সিস্টেমে ইন্টারনেট বা ওয়েব ইনফরমেশনের পরিমান ব্যাপকভাৱে বৃদ্ধি পায়। এসব তথ্য ক্রেতা, বিক্রেতা বা পরিদর্শক সবার কাছে সহজলভ্য হয়। ই-কমার্স e-commerce প্রযুক্তি ইনফরমেশন সংগ্রহ, সংরক্ষণ, যােগাযােগ এবং প্রক্রিয়াকরণের মূল্য হ্রাস করে। একই সময়ে এসব তথ্য আন্তর্জাতিক মান ও মূল্য বিবেচনায় সঠিক ও সময় উপযােগী হয়ে থাকে। যার ফলে এসব তথ্য হয় অধিক গ্রহণযােগ্য ও অধিক গুনগতমানসম্পন্ন।

ব্যক্তিগতভাবে যত্নশীলতা: ই-কমার্স e-commerce প্রযুক্তি ব্যক্তি ব্যক্তি বিশেষে বিভিন্ন হতে পারে। অর্থাৎ কোনাে বিক্রেতা ইচ্ছে করলেই তার বিক্রয়যোগ্য দ্রব্য বিশেষ কোনাে ব্যক্তি বা গােষ্ঠির জন্য উন্মুক্ত রাখতে পারে। আবার অন্যভাবে ক্রেতারা ইচ্ছে করলেই কোনাে বিক্রেতাকে এড়াতে পারে। ফলে তথ্যের বাহুল্যতা এবং অপ্রয়ােজনীয় ক্রেতা বা বিক্রেতার পরিমান এখানে সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায় ।

ই-কমার্স e-commerce এর সুবিধা

১। ই-কমার্স e-commerce পদ্ধতি কোনাে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করতে সাহায্য করে। u003cbru003e২। এর মাধ্যমে দ্রুত ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন ও কাঙ্খিত পণ্য সহজে খুঁজে পাওয়া যায় । u003cbru003e৩। এই ব্যবসা পদ্ধতি ডিজিটাল হওয়ায় ব্যবসা পরিচালনায় খরচ কম হয়।u003cbru003e৪। এর মাধ্যমে ভৌগােলিক সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে সহজেই ক্রেতার কাছে পণ্য পৌছানো যায় ।u003cbru003e৫। এর ফলে আর্থিক লেনদেনের খরচ কম হয়।u003cbru003e৬। এ পদ্ধতিতে তথ্য প্রক্রিয়াকরণের বিভিন্ন খরচাদি; যেমন- তৈরি করা, বিতরণ করা, সংরক্ষণ করাu003cbru003eইত্যাদি কার্যক্রমের খরচ ব্যাপকভাবে কমে যায়।u003cbru003e৭। যোগাযোগ সহজলভ্য হওয়ায় ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে সহজেই সুসম্পর্ক তৈরি করা যায়।u003cbru003e৮। ই-কমার্স এর ফলে ব্যবসায়িক ব্যয় সংকোচনের পাশাপাশি ক্রেতার পণ্য কেনাকাটার খরচও কমে যায় এবং কেনাকাটার গতির সঞ্চার হয়।u003cbru003e৯। ই-কমার্স e-commerce এর মাধ্যমে কেনাকাটা করার ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অনেক কর্ম সময় সেভ হয়।u003cbru003e১০। এই মাধ্যমে অতি দ্রুত পন্য ভােক্তার কাছে পৌছানো যায়।u003cbru003e১১। এক্ষেত্রে কাস্টমারকে উন্নত সার্ভিস প্রদানের সুবিধা দেয়া সম্ভব হয়।u003cbru003e১২। ই-কমার্স e-commerce এর অন্তর্ভুক্ত ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো পরস্পরের ব্যবসা পরিচালনা পদ্ধতি, সার্ভিস এবং মূল্য সম্বন্ধীয় তথ্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ওয়েব সাইটের সাহায্যে অতি সহজেই জানতে পারে। যার ফলে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে প্রতিযােগিতা বৃদ্ধি পায়।u003cbru003e১৩। ই-কমার্স e-commerce এর প্রসারতার ফলে বাজারে নতুন ধরনের চাকরির সুযােগ সৃষ্টি হয়েছে যেমন-মাল্টিমিডিয়া ডেভেলপার, ডেটাবেস ডিজাইনার, প্রােগ্রামার ইত্যাদি আরো বহুবিধ চাকরির সুযােগ সৃষ্টি হয়েছে।u003cbru003e১৪। ই-কমার্স e-commerce পদ্ধতি স্বল্প সময়ে বাজার যাচাইয়ের সুবিধা প্রদান করে এবং তাৎক্ষনিক অর্ডার প্রদান ও গ্রহণের সুবিধা প্রদান করে।

See also  ব্লগ তৈরি করার নিয়ম ২০২২ | খুব সহজেই ব্লগ তৈরি করুন

ই-কমার্স e-commerce এ অসুবিধাসমূহ

১। দক্ষ লােকবলের অভাব ।u003cbru003e২। উন্নত প্রযুক্তির প্রয়ােগ বেশ ব্যয়বহুল।u003cbru003e৩। দূরবর্তী স্থানের অর্ডার ক্ষেত্রবিশেষে একটু ব্যয়বহুল।u003cbru003e৪। মাত্রাতিরিক্ত অর্ডার হলে সরবরাহের ক্ষেত্রে অনেক সময় সমস্যা হয়।u003cbru003e৫। ডিজিটাল সিস্টেমে আর্থিক লেনদেন হওয়ায়। অনেক সময় আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার অভাব হয়।u003cbru003e৬। ভার্চুয়াল সিস্টেম হওয়ায় বা পূর্ব তিক্ত অভিজ্ঞতা থাকায় ক্রেতা বা বিক্রেতা অনেক সময় ই-কমার্স e-commerce কার্যক্রমের উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে পারে না।u003cbru003e৭। আইন প্রণয়নকারী এবং প্রয়ােগকারী উভয়পক্ষের জন্য আইন প্রণয়ন ও প্রয়ােগ অত্যন্ত জটিল এবংu003cbru003eকষ্টসাধ্য বিষয় হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে নিত্যনতুন সংযোজন ও বিয়োজন প্রয়োজন হয়।u003cbru003e৮। অনেকসময় ই-কমার্স e-commerce এর ক্ষেত্রে প্রাথমিক খরচাদি বেশি হয় এবং অভিজ্ঞতার অভাবে পন্য ও সেবা পেতে দেরী হয়। যা বিরক্তির কারন হয়ে দাঁড়ায়।

Leave a Comment