ছোট গল্প: মায়ের চিঠি
ছোট গল্প: মায়ের চিঠি প্রেক্ষাপটঃ ৫২'র ভাষা আন্দোলন। কলমেঃ সাদেকুল ইসলাম কিশোরগঞ্জ, নীলফামারী।
বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান আবির। ছোট বেলা থেকেই সে ছিল একজন দেশপ্রেমিক। ছেলেটি ছিল খুবই মেধাবী ও চৌকস।
নীজ জেলা থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের জন্য চলে আসে ঢাকায়। সুযোগ হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার। ১৯৫২ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারী। আবিরের মা আবিরকে চিঠি পাঠিয়েছে।
চিঠিতে লেখা,
“বাবা আবির,
কেমন আছিস তুই? তোকে কতদিন দেখিনা। বাসায়ও আসিসনা অনেকদিন থেকে,। হ্যাঁ রে খোকা,তুই কি ঠিক ভাবে খাওয়া করিস? শরীরের যত্ন নিসতো ঠিকমতো?
তোকে নিয়ে তোর বাবা সব সময় খুব চিন্তিত থাকে, তোকে নিয়ে আমারো খুব ভয় হয়রে বাপ। তুই তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসিস, তোর জন্য ২টি বড় বড় লাল মোরগ রেখেছি, চিকন চাল ও রেখেছি, তোর তো আবার নারকেল পিঠা খুব পছন্দ, তাই নারকেল ও রেখেছি।
নিজের খেয়াল রাখিস বাবা, তোর বাসায় আসতে দেরি হলে আমায় একটা চিঠি দিস
ইতি তোর মা”।
চিঠিটি পড়ে আবিরের চোখে জল চলে আসে,কারন সে তার মাকে অনেক বেশি ভালবাসে। তাছাড়া বাসা থেকে এসেছে এবার অনেক দিন হয়ে গেছে, সেজন্য তারও বাসা যাওয়ার খুব ইচ্ছে জাগলো। এদিকে পাকিস্তানিরা বাঙালিদের উপর চাপিয়ে দিতে চায় তাদের ভাষা উর্দুকে। কিন্তু বাঙালিরা তাদের মাতৃভাষা বাংলার বদলে উর্দুকে মেনে নিতে পারেনি। তাই তারা বিক্ষোভ আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন।
২১শে ফেব্রুয়ারী আবির ও তার বন্ধুরা মিলে ছাত্রসংসদ থেকে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করছে। এমন পরিস্থিতিতে আবির বাসায় যেতে পারতেছেনা। তাই সে তার মাকে একটা চিঠি লিখে,
তারিখ-১৯।০২।১৯৫২ খ্রিঃ
“প্রিয় মা,
সালাম নিও। আমি ভালো আছি। আশা করি আব্বা সহ ভালোই আছো।বাবাকে বলিও আমাকে নিয়ে যেন কোনো দুঃশ্চিতা না করে। তুমিও কোনো চিন্তা করবেনা আমায় নিয়ে। আমি খুব শীঘ্রই বাসা ফিরে আসবো মা,এবার বাসায় গিয়ে অনেক দিন থাকবো। তোমার হাতের রান্না কতদিন খাইনি,এবার গিয়ে খাবো।
জানো মা, ওরা (পাকিস্তানিরা)আমাদের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে। জন্মের পর থেকেই তুমি যে ভাষা শিখিয়েছ ওরা সে ভাষার পরিবর্তে উর্দুকে চাপিয়ে দিতে চায়। তাই কি করে সম্ভব হয় বলো।
তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার আন্দোলন না করে কিভাবে বাসায় ফিরে যাই বলো?
তবে শীঘ্রই বাসায় ফিরে আসবো মা,তুমি কোনো চিন্তা করিওনা।
নিজের শরীরের যত্ন নিও,আর বাবার খেয়াল রেখো।
ইতি তোমার আবির”।
চিঠিটি লিখে আবির তার সাদা শার্টের বুক পকেটে রাখে। কাজের ব্যাস্ততার জন্য সে চিঠিটি পোস্ট অফিসে জমা করতে পারেনী।
দেখতে দেখতে ২১শে ফেব্রুয়ারী চলে এলো।
আবির ও তার বন্ধুরা মিলে প্লেকার্ড, ফেসটুন,ব্যানার নিয়ে মিছিল বের করে।
তারা সবাই জোরে জোরে মিছিল করতে থাকে ” তোমার ভাষা,আমার ভাষা,বাংলা ভাষা, বাংলা ভাষা”, রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই,” “বাংলা চাই, বাংলা চাই”।
তাদের মিছিলে সামিল হয়েছে বিভিন্ন শ্রেণীর লোকজন। তাদের মিছিল বেগবান ভাবে সামনে এগুতে থাকে, হঠাৎ পুলিশ গুলি চালানো শুরু করে। সবাই ছুটাছুটি করতে শুরু করলো।
আচমকা একটা গুলি এসে আবিরের বুকে লাগে। আবিরের সাদা শার্ট রক্তে লাল হয়ে গেল, লাল হয়ে গেলো বুক পকেটে রাখা তার মায়ের জন্য লেখা চিঠি। মাটিতে গড়িয়ে পড়লো আবিরের রক্তমাখা নিথর দেহ।
আবিরের রক্তে অর্জিত হলো আমাদের রাষ্ট্র ভাষা বাংলা। আবির চিরদিনের জন্য ফিরে এলেন তার মায়ের কাছে। আবিরের রক্তমাখা চিঠি পড়ে তার মায়ের অশ্রুবিসর্জন হতে লাগলো। আর গর্বে বুক ফুলিয়ে বলতে লাগলো আমার আবির, তুই ফিরে এলি এভাবে! তুই থাকবি সবার মুখে।
অন্যবাংলা অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুনআরো পড়ুন হারানোর পথে পাখির কলকাকলি
আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন আমাদের টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত হন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজ এ যুক্ত হন