স্মরজিৎ ব্যানার্জি এর গল্প শেষ চিঠি
অন্যবাংলায় আজকে প্রকাশিত হলো স্মরজিৎ ব্যানার্জি এর শেষ চিঠি শিরোনামে ১ টি চমৎকার গল্প। আপনারা এই শেষ চিঠি গল্পটি পড়ুন ও আপনাদের মতামত জানান।
শিরোনাম: শেষ চিঠি
কলমে: স্মরজিৎ ব্যানার্জি
রবিনবাবু আজ অনেকদিন পর মিউজিয়ামে এসেছেন । তিনি ইতিহাসের অধ্যাপক দীর্ঘ ৩০ বছর নানা কারণে এই মিউজিয়ামে আসছেন তিনি, আজ গেটে দিয়ে ঢুকতেই দেখা হল হারুর সঙ্গে। হারু এই মিউজিয়ামের দারোয়ান রবিন বাবুকে দেখতে পেয়েছে বলল স্যার আজ বড্ড দেরি করে ফেললেন, রবিনবাবু বললেন হ্যাঁ বাবা বয়স হয়েছে আর খুব একটা বেরোতে পারি না। একতলা লম্বা করিডর পেরিয়ে একটা ঘরে নতুন সমস্ত জিনিস রাখা থাকে। ঘরে ঢুকে একটা টেবিলে বসলেন রবিন বাবু সামনে রাখা একটা পোস্টকার্ডের ছেঁড়া টুকরো।
তারিখটা আবছা আবছা পড়া যাচ্ছে ১৯৪৫ সাল ২রা সেপ্টেম্বর অর্থাৎ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার চিঠি, পকেট থেকে আতস কাঁচটা বের করে পড়তে শুরু করলেন তিনি ধীরে ধীরে অক্ষর গুলো মুছে গিয়ে একটা ছবি ফুটে উঠতে লাগলো। রাত আনুমানিক বারোটা টেবিলে বসে আছেন কর্নেল মিচেল, সামনে জ্বলছে একটা মোমবাতি তার কম্পিত আলোয় রিপোর্ট লিখছেন তিনি ছাত্র জীবনে পড়তেন মিশনারি স্কুলে ইচ্ছা ছিল একজন বড় শিল্পী হবেন কিন্তু হঠাৎ এক সর্বনাশা যুদ্ধ সব উল্টে পাল্টে দিল। হতাশায় দীর্ঘশ্বাস ফেলেন তিনি বড় ক্লান্ত লাগছে তার বাইরে ভেসে আসছে সৈন্যদের কোলাহল মাঝে মাঝে আকাশ দিয়ে উড়ে যাচ্ছে দু একটা যুদ্ধবিমান।
হঠাৎ সেসব ছাপিয়ে শোনা গেল একটা গোলমালের শব্দ , ব্যাপার দেখতে বাইরে আসছিলেন কর্নেল, কিন্তু তার আগেই তার তাঁবুতে ঢুকলো কয়েকজন ইংরেজ সৈন্য তাদের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বাঁধা একটা লোক বন্দির পোশাক দেখে বোঝা যাচ্ছে সে শত্রুপক্ষের লোক সম্ভবত জাপানি । ধাক্কা দিয়ে তাকে চেয়ারে বসিয়ে দিল সৈন্যরা আপনার নাম? প্রশ্ন করলেন কর্নেল লোকটা খুব সহজভাবেই উত্তর দিল। মেজর তাইসুকো । চমকে উঠলেন মিচেল ব্রিটিশ সৈন্যদের কাছে মূর্তিমান ত্রাস এই মেজর এদের পূর্বপুরুষ ছিলেন বর্তমান জাপানের অতি প্রাচীন এক রাজবংশ।
আরো পড়ুন সাদেকুল ইসলাম এর প্রবন্ধ স্বপ্ন
সেই মেজর তাইসুকো ্তার সামনে বসে আছে বন্দি অবস্থায়, এতো অসম্ভব কর্নেলের মনের কথা বুঝতে পেরে সামনের লোকটা বলে উঠল হ্যাঁ আপনি ঠিকই ধরেছেন আমি সেই তাইসুকো জল ফুরিয়ে গিয়েছিল তাই জল আনতে বেরিয়েছিলাম হঠাৎই আপনার সৈন্যরা আমাকে আক্রমণ করে আমার মাথায় আঘাত করে আমাকে বন্দী করে। কর্নেল দেখলেন মেজরের কপালে একটা ক্ষত চিহ্ন, তিনি বেশ রাগত স্বরে তার সৈন্যদের দিকে ফিরে বললেন সৈন্য হতে গেলে একটা শৃঙ্খলা থাকতে হয় সেটা কি ভুলে গেছো তোমরা দ্বিতীয়বার এমন হলে আমি তোমাদের কোট মার্শাল করতে বাধ্য হব।
যাও বাইরে যাও মেজর এবার বললেন আমি কি একটু জল পেতে পারি? মিচেল তাড়াতাড়ি জলে পাত্র টা এগিয়ে দিলেন তার দিকে, এবার মেজর বললেন আমার বাঁধন টা একটু খুলে দিন জল খেয়ে তিনি তিনি তার উর্দির পকেট থেকে বের করলেন একটা চিরকুট, বললেন আমি এখন যুদ্ধ বন্দি আমার পরিনতি জানি না এই চিঠিটা আমার বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করবেন। আমার স্ত্রী খুব ফুল ভালোবাসে ,জানেন আমাদের বাড়িতে ও একটা বাগান করেছে গত মাসে আমাকে চিঠি লিখেও জানতে চেয়েছিল আমি কবে দেশে ফিরব আমাকে বাগান দেখাতে ও ভীষণ উৎসাহী।
অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন মিচেল , যে লোকটাকে এতদিন একজন দুর্ধর্ষ সেনাপতি ভেবেছেন সে এত সহজে কি করে খুশি হতে পারে! চিরকুট টা নিয়ে তিনি টেবিলের উপর রাখলেন বললেন আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন মেজর আপনার চিঠির সঙ্গে আপনিও নিশ্চয়ই দেশে ফিরবেন । এমন সময় তীব্র বিস্ফোরণের শব্দ সঙ্গে আলোর ঝলকানি আকাশ দিয়ে রাতচরা শিকারি পাখির মতো উড়ে গেল কয়েকটা বোমারু বিমান ,একটু পরে ছায়ার মত এগিয়ে এলো কয়েকজন সৈনিক নক্ষত্রের আলোয় চকচক করে উঠল বন্দুকের নল কিছু খুঁজছে তারা। এমন সময় খট করে একটা শব্দে চমক ভাঙ্গে রবিন বাবুর হারু আলো জ্বালিয়ে দিয়েছে তাকে দেখে সে বলে ওঠে বাড়ি যাবেন না স্যার ছটা বেজে গেছে উঠে পড়লেন তিনি এরকম কত অসমাপ্ত কথা হারিয়ে গেছে কালের গর্ভে তার খবর কে রাখে।
আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন আমাদের টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত হন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজ এ যুক্ত হন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল এ যুক্ত হন