সাদেকুল ইসলাম এর প্রবন্ধ স্বপ্ন
অন্যবাংলায় আজকে প্রকাশিত হলো সাদেকুল ইসলাম এর স্বপ্ন শিরোনামে ১ টি চমৎকার প্রবন্ধ। আপনারা এই স্বপ্ন প্রবন্ধটি পড়ুন ও আপনাদের মতামত জানান।
শিরোনাম: স্বপ্ন
কলমে: সাদেকুল ইসলাম
চঞ্চল, হাসিখুশি, মায়ামাখা ও লাবণ্যময়তা মেয়ে রূপা। গরীব বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান সে। মেয়েটি দেখতে যেমন মায়াবী, তেমনি বুদ্ধিমতীও বটে। সেবার রূপা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পি.এস.সি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছিল। রূপার বাবা একজন রিক্সাচালক। পরিবারের অসচ্ছলতার কারণেও রূপাকে তার বাবা ভালো কোথাও ভর্তি করাতে পারেনি। পাশের গ্রামের একটা বালিকা বিদ্যালয়ে তাকে ভর্তি করে দেয়।
দেখতে দেখতে কেটে যায় দুটি বছর। রূপা সপ্তম শ্রেণীতে ভালো রেজাল্ট করে অষ্টম শ্রেণীতে ওঠে।
রূপার বয়স যখন চৌদ্দ ,তখন তার বয়ঃসন্ধিকাল। বয়ঃসন্ধিকালের জন্য পরিবর্তন আসে রূপার শরীরে। পরিবর্তন হতে থাকে তার চলাফেরায় ভাবভঙ্গিতেও আর দশজন বয়ঃসন্ধিকালের মেয়ের মতো সেও কারোর সাথে তেমন মেশে না, সব সময় একা থাকতে চায়।
রূপার বাবার আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় তাকে না পারে সাইকেল কিনে দিতে কিংবা প্রতিদিন স্কুলে যাতায়াতের ভাড়া দিতে। তাই রূপাকে কষ্ট করে হেঁটেই প্রায় তিন কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে স্কুলে যাতায়াত করতে হয়। প্রতিদিনের ন্যায় রূপা একদিন একা হেঁটে হেঁটে স্কুল থেকে বাড়িতে ফিরছিলো, হঠাৎ দু’-তিনটে ছেলে তার পিছু নেয়, জোরে জোরে মুখে নানা রকম অশ্লীল শব্দ করতে থাকে,সেইসঙ্গে রূপাকে নানান ভাবে উত্যক্তও করতে পিছপা হয়না।
রূপা কাউকে কিছু না বলে চুপচাপ বাসায় ফিরে আসে।
ঘরে ফিরেই চুপচাপ তার বিছানায় শুয়ে পড়ে,এদিকে তার মা, মেয়ের এরকম কাণ্ড দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে ছুটে আসে রূপার কাছে। জিজ্ঞেস করে,”রূপা! ও রূপা! কি হয়েছে রে মা তোর? আজ কেন জানিনা ইস্কুল থেকে বাড়িতে এসেই বিছানায় শুয়ে পড়লি?
তোর কিছু হয়েছে নাকি মা? তোর কি শরীর খারাপ করছে?
মায়ের এত প্রশ্ন শুনে রূপা একটা কথাই বলে দেয়, “আমার কিছুই হয়নি মা,আমি এমনিই শুয়ে আছি “।
এভাবে কেটে গেল বেশ কয়েকদিন, রূপার সাথে প্রতিনিয়তই ঘটছে বখাটে ছেলেদের এরকম উত্যক্ত করার কাহিনী। রূপা এরকম সময়(বয়ঃসন্ধিকালের সময়) কারোর সাথে মেশেনা। না পারে কারোর সাথে তার সমস্যার কথাগুলো শেয়ার করতে, না পারে বখাটে ছেলেদের কুরুচিপূর্ণ আচরণ সহ্য করতে।
পরিশেষে রূপা তার মাকে সব কিছু খুলে বলে।
এদিকে রূপার মা,মেয়ের এরকম কথা শুনে খুব ভয় পেয়ে যায়,রূপার বাবাকে সবকিছু খুলে বলে। রূপার বাবা মেয়ের এরকম কথা শুনে হতভম্ব হয়ে যায়। তারা দুজনে মিলে সিদ্ধান্ত নেয় রুপাকে বিয়ে দিয়ে দিবে। বন্ধ করে দেয় রূপার স্কুলে যাওয়া। এভাবে কেটে গেল ছয় দিন। রূপার কিছুই ভালো লাগে না,সে ঘরে বসে থাকতে চায় না, তার মধ্যে রয়েছে অদম্য প্রতিভা ,রয়েছে একজন ডাক্তার হওয়ার তীব্র স্বপ্ন। কিন্তু তার সাথে ঘটে যাওয়া এরকম অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য তাকে থাকতে হচ্ছে বাড়িতে।
এভাবে চলতে চলতে একদিন পাশের গ্রাম থেকে এক ঘটক আসে রূপাদের বাড়িতে,রূপার বাবার সাথে কি যেন কথা বলে সেই ঘটক,যা রুপা ঘর থেকে শুনতে পায়। আসলে ঘটক এসেছে রূপার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে, ছেলের বাবার অনেক জমি-জমা আছে, শুধু তাই নয়,রয়েছে পাকা বাড়ি। যেই কথা সেই কাজ। ঘটকের কথা মত ছেলে পক্ষ আসে রূপাকে দেখতে, রূপার রূপলাবণ্য দেখে তারা পছন্দ করে, যৌতুক ছাড়াই দেন বিয়ের প্রস্তাব। বিয়ের দিনও ঠিক করা হলো। রূপা বিয়ে করতে না চাইলেও তার বাবা- মা তাকে নানান ভাবে বুঝিয়ে বিয়ে দিয়ে দেন।
রূপা একটা বাচ্চা মেয়ে বয়স মাত্র চৌদ্দ, আর ছেলেটার বয়স হবে প্রায় সাতাশ বছর। রূপা তার স্বপ্নকে দমিয়ে দিয়ে শুরু করে স্বামীর সাথে সংসার। দেখতে দেখতে কেটে গেল রূপার বৈবাহিক জীবনের একটি বছর। প্রথমত রুপার স্বামী তাকে আদর যত্ন করলেও পরে তার সাথে শুরু করে অন্যরকম ব্যবহার। তার কারণ, রূপার স্বামী মাদকাসক্ত ছিল। রূপা মা হতে চলেছে, চার মাসের গর্ভবতী হলো রুপা।রূপার শাশুড়ি তাকে দিয়েই সব কাজ করিয়ে নিত, একটুতেই বকাঝকা শুরু করেন।
রূপার স্বামীও তার সাথে বাজে ব্যবহার করতে থাকে, কথায় কথায় তার উপরে হাত তোলে। শুরু হয় রূপার প্রতি শারীরিক নির্যাতন। রূপা একদিন এর প্রতিবাদ করলে,তার স্বামী তাকে খুব মারধর করে,রূপা অজ্ঞান হয়ে যায়। পরে জ্ঞান ফিরলে আবার তাকে মারধর করে তার বাবার কাছে দু’লক্ষ টাকা যৌতুক দাবি করে। রূপা কিছুই বলতে পারেনা, তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেয় আর দু’লক্ষ টাকা আনতে বলে।
রূপা বাড়িতে এসে তার বাবা -মাকে সমস্ত ঘটনা খুলে বলে, মেয়ের এরকম দুর্দশার কথা শুনে রূপার মা কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। তারা রূপার স্বামীর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও রূপার স্বামী স্পষ্ট করে বলে দেয় দু’ লক্ষ টাকা সমেতজ মেয়েকে পাঠাবেন আর না হলে আর কোনোদিন পাঠাবেন না। ভেঙে পড়ে রূপার বাবা। টাকা জোগাড় করতে না পারায় রূপাকে তাদের বাসায় রেখে দেন। দিন গেল, মাস গেল এভাবে ঘনিয়ে এলো রূপার বাচ্চা প্রসবের সময়।
ন’মাস যেতেই শুরু হয় রূপার প্রসব বেদনা। কষ্টে ছটফট শুরু করে রুপা।। টানা দু’দিন প্রসব বেদনায় রূপা ছটফটা করলেও হাসপাতালে ভর্তি করার টাকা জোগাড় করতে না পেরে অবশেষে রূপার বাবা তার রিক্সা বিক্রি করে, সে টাকা দিয়ে রূপাকে হাসপাতালে ভর্তি করান।
মেডিকেলের ডাক্তাররা জানান,রোগীর অবস্থা ভালো না। তারা অনেক চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারেনি রূপাকে। গর্ভকালীন সময়ে রূপার উপর অমানবিক নির্যাতনের,অগাধ শারীরিক পরিশ্রম ও বয়স কম হওয়ার কারনে রূপা বাচ্চা প্রসবের সময় মারা যায়। তার গর্ভ থেকে জন্ম নেয় এক ফুটফুটে কন্যা সন্তান । রূপার বাবা- মায়ের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। তাদের একমাত্র মেয়েকে চিরতরে হারিয়ে তারা পাগল প্রায়। কিন্তু রূপার রেখে যাওযা চাঁদের মতো ফুটফুটে বাচ্চাকে বুকে আগলে ধরে চোখের জল মোছে রূপার বাবা -মা। তারা রূপার বাচ্চার নান রাখেন “ঈপ্সিতা”।
আমাদের সমাজে আজকাল, ইভটিজিং, বাল্যবিবাহ, যৌতুক,পণ প্রথা,নারী নির্যাতন ও অকাল মৃত্যু অহরহ ঘটেছে। তাই সমাজের সকলের নিকট লেখকের আকুল নিবেদন, সমাজ, রাষ্ট্র তথা পুরো দেশ থেকে যেন এই ইভটিজিং, বাল্যবিবাহ, যৌতুক,পণপ্রথা, নারী নির্যাতন ও অকাল মৃত্যু অচিরেই বন্ধ হয়ে যায়,সেই লক্ষ্যে সবাইকে কাজ করতে হবে।
আরো পড়ুন হারানোর পথে পাখির কলকাকলি ছোট গল্প: মায়ের চিঠি দেশলাইয়ের বাক্স ধারাবাহিক গল্প মামলাণু (১ম পর্ব) ধারাবাহিক গল্প মামলাণু ২য় পর্ব ধারাবাহিক গল্প মামলাণু শেষ পর্ব চিত্তরঞ্জন দেবভূতি এর শীতের কবিতা রাজযোটক - সুমিতা চৌধুরীর গল্প সুশান্ত সেন এর কবিতা মালভূমি, একদিন ও অস্থির মুস্তাক আহমেদ এর মধ্যবিত্ত শিরোনামে কবিতা টিনটিনের কৌটো কবিতা সমগ্র ১ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৩ নিয়ে অন্যবাংলা’র বিশেষ সংখ্যা সাপ্তাহিক কবিতা সমগ্র ২ শাশ্বত ধর এর সম্ভবামী যুগে যুগে বই পর্যালোচনা সুমিত মুখার্জীর গল্প অতৃপ্ত আত্মার কাহিনী
আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন আমাদের টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত হন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজ এ যুক্ত হন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল এ যুক্ত হন