অন্যবাংলায় আজকে প্রকাশিত হলো শাশ্বত ধর এর বই সম্ভবামী এর বই পর্যালোচনা। বই পর্যালোচনাটি করেছেন সাগ্নিক। আপনারা এই বই পর্যালোচনাটি পড়ুন ও আপনাদের মতামত জানান।
শাশ্বত ধর এর সম্ভবামী যুগে যুগে বই পর্যালোচনা
বই: সম্ভবামী যুগে যুগে
লেখক: শাশ্বত ধর
বই রিভিউ: সাগ্নিক
ধরা যাক আপনি একজন গুহামানব। রিলেট করতে পারলেন না তো? আচ্ছা ধরে নিন আপনি পাতাখোর, দিনরাত শুধু পাতা খান আর ঘোরের মধ্যে শুয়ে হু হু করেন। (খারাপ ভাববেন না এখানে আমি সম্ভবত বইয়ের পাতার কথাই বলছিলাম, যাক গে।)
তো এইরকম আপনি সেই ডায়নোসর দের পটল তোলার পর থেকে হঠাৎ আজকে জেগে উঠলেন, তারপর খেয়াল কল্লেন আরি শ্লা, ” পৃথিবী বদলে গেছে, সবই যে নতুন লাগে”
এর মধ্যে গোদের উপর বিষফোঁড়া হল গিয়ে, আপনার হাতে সস্তায় নেট আছে, ( ঠিক যে নেট ব্যবহার করে আমি এই পিডিএফ টি পড়েছি)। সেই নেট কিভাবে খচ্চা করবেন আপনি বুইতে না পেরে ঠিক করলেন একখান গপ্প ফাঁদবেন। কেন? কারণ আপনার বইমেলার ফিশ ফ্রাইয়ের উপর বেজায় লোভ। কিন্তু নিজের লেখা বই না বার করতে পারলে যে বইমেলায় যাওয়া যায় না, এটা তো সবাই জানে।
তো আপনি বসলেন গুগল করতে। দিনরাত এক করে পাতা খেয়ে আর গুগল করে টরে এক শা করে ফেললেন, মাথার ঘাম পায়ে পড়ে শুকিয়ে গিয়ে আবার মাথা দিয়ে ঝরতে লাগল….ঠিক এই সময়েই আপনি বলে উঠলেন “ইউরেকা”। ম্যাজিক ফর্মুলা আপনি ধরে ফেলেছেন।। তারপর বিশাল একখান জং ধরা কড়াই বার করে একগাদা পেঁয়াজ লঙ্কা কুচি দিয়ে ইমামী কাচ্চি ঘানি সর্ষের তেল ঢেলে কষে ফেললেন খান দশেক উইকি পেজ, বিশ মণি ওজনের ইতিহাসের বই, ড্যান ব্রাউন থেকে সিদ্দিক আহমেদের থ্রিলার, সঙ্গে স্বাদমতো অকারণ সরকারবিরোধীতার মশলা। কারণ আপনি জানেন, “ভালো রান্না করতে লাগে শুধু একটু খানি কুকমী”
আপনার নাম যদি শাস্বত ধর হয়, আর এই লেখাটা যদি আপনি পড়েন – রাগ কইরেন না ছ্যার, আমার জীবনের দুঘণ্টা ইনক্লুডিং রবিবারের মাংস আর দুপুরের ঘুমের আরাম আপনি হারাম করে দিয়েছেন। বিশ্বাস করুন খুব ভালো একটা রিভিউ লিখব ভেবেছিলুম। কি বললেন, রিভিউ লিখতে শিখিনি? ওটা সবাই পারে না? আচ্ছা আর গালি দেবেন না। এই যে লিখুম –
বইটার প্রথম অ্যাড দেখি ফেসবুকের এক বইয়ের গ্রুপে। বইমেলার দিন পনেরো আগে পুরাণ নির্ভর সাসপেন্স থ্রিলার হিসেবে টিজার লঞ্চ হয়েছিল, বেশ একটা জমাটি হাইপ তৈরি করে ফেলেছিল কদিনেই। বইমেলা যাওয়া হয়নি এবারে, তবে গেলে যে পাঁচটি বই কিনব বলে লিস্ট বানিয়েছিলাম, তাতে কিন্তু একেনবাবু 6 কিংবা সায়ক আমানের বইয়ের পাশে নাম ছিল এই বইয়েরও।
গল্পের ছলে মহাভারতের এক অংশের রেফারেন্স দিয়ে বেশ সুন্দর একটা আগ্রহ জাগানো প্রাক কথন, পরের পাতা উল্টাতে বাধ্য করবে আপনাকে।
কভারে সামুদ্রিক নীল ব্যাকগ্রাউন্ডে বিশাল চতুর্ভুজ মূর্তি দেখে আন্দাজ করেছিলাম কৃষ্ণকে ঘিরেই নিশ্চয়ই কোনো থিয়োরি তুলে এনেছে এই বইটা। সেটা ঠিকই। বইয়ের মূল উপজীব্য আরব সাগরের তলায় লুকিয়ে থাকা প্রাচীন দ্বারকা নগরীর ধংসাবশেষ এবং কৃষ্ণ বাস্তবেই একজন ঐতিহাসিক চরিত্র কি না, সেই বিতর্ক।
মুখ্য চরিত্র সাত্যকি একজন জার্নালিস্ট ও লেখক, সেই সাথে প্রাচীন পুরাণ এবং শাস্ত্র বিষয়েও তার বিস্তর গবেষণা রয়েছে। যাদবপুরে মহাভারত সংক্রান্ত এক সেমিনারে বক্তৃতা দিতে দিতেই হঠাৎ একটা ফোন আসে তার নাম্বারে, আর অনেকগুলো মেসেজ। যাতে বক্তব্য একটাই, আর সেটা ভীষণ অদ্ভুত – ” কৃষ্ণকে খুঁজে পাওয়া গেছে”
গল্পের শুরু এখানেই, এবং গল্পের গরুর গাছের চড়ারও। প্রাক কথন অংশটি পড়ার পর প্রাঞ্জল ভাষা এবং সুন্দর উপস্থাপনা দেখে বইটার সম্মন্ধে যেমন হঠাৎ করেই ভালো লাগা তৈরি হচ্ছিল, পরের অধ্যায়গুলো পড়ার পর সত্যিই বেশ বিস্মিত হলাম, এবং হতাশও। বারবার মনে হচ্ছিল, লেখক যথেষ্ট পড়াশুনো করে পরিকল্পনা করেছিলেন আরও বড়ো এবং ডিটেইলড একটি উপন্যাসের, কিন্তু প্রকাশকের তাড়া বা লেখকের উৎসাহের অকালমৃত্যু – যে কারণেই হোক, ভীষণ তাড়াহুড়ো করে বাকি গল্পটা যেনতেন প্রকারে গিলিয়ে দিয়েছেন যেন। চরিত্রায়ন কিংবা থ্রিলার মূল চালিকাশক্তি যে অসহ্য সাসপেন্স, তার দেখা মিলল কই! সাত্যকি চরিত্রটি মুখ্য চরিত্র হিসেবে দেখানো হলেও, প্রতি পাতার অর্ধেক জুড়ে চলমান গুগল পেজের মতো অনর্গল মুখস্ত তথ্য আউড়ে যাওয়া ছাড়া তাকে বিশেষ উল্লেখযোগ্য কিছুই করতে দেখা যায় না।
বইয়ে সংলাপ কিংবা কথোপকথন ব্যাপারটা এসেছে কচ্চিৎ কদাচিৎ, চরিত্ররা সবাই মিলে যেন হোমওয়ার্ক করে এসে ক্লাসের পড়া বলার মত পাতার পর পাতা জুড়ে শুধু ইতিহাসই বলে গেল একই প্রাণহীন ভঙ্গিতে। এমনকি শেষের ক্লাইম্যাক্স চ্যাপ্টারেও গোলাগুলি বন্দুক কামান মায় হেলিকপ্টার এমনকি আর্মি কে নিয়ে এসে প্রায় সিনেমার মত সাজিয়েও উত্তেজনাটা কিছুতেই আর জমল না। যেন হঠাৎ করেই মিলিয়ে দেওয়া হল সবকিছু, তারপর অত্যন্ত খাপছাড়া ভাবে সত্যিকারের কোনো closure ছাড়াই শেষ হয়ে গেল বইটি। তার সাথে অত্যন্ত অপ্রাসঙ্গিক ভাবেই জায়গায় জায়গায় গুঁজে দেওয়া হয়েছে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বিশেষ একটি সরকার সম্মন্ধে লেখকের বিরূপ মনোভাব, যেগুলো কাহিনীতে ব্যবহারের স্বার্থে যে জোলো লজিকটি ব্যবহার করা হয়েছে সেটা এখানে লিখলে, গোটা বইটারই স্পয়লার দেওয়া হয়ে যাবে।
ইনফো ফিকশন সাহিত্যের একটি আকর্ষনীয় ধারা। কিন্তু ভালো করে ইতিহাস, বিজ্ঞান ইত্যাদির মিশেলে লেখা ইনফো ফিকশন যেমন সুখপাঠ্য হয়, তেমনই লোভ সামলাতে না পারলেই ভরাডুবি হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা। লেখকের এই বইয়ে ঠিক সেটাই হয়েছে। ব্যাকগ্রাউন্ড রিসার্চ করে পাওয়া অজস্র তথ্যের কোনোটাই বাদ দিতে পারেননি তিনি, তাই সবগুলোকেই যেভাবেই হোক বইয়ে ব্যবহার করার চেষ্টা করেছেন। সেটা সফল হতে পারত, যদি বইটি 121 পাতার না হয়ে 521 পাতার হতো, আর ইতিহাস এবং পুরাণ এর রেফারেন্স দেওয়ার পাশাপাশি গল্পের মানুষগুলিকে সত্যিকারের রক্ত মাংসের মানুষের মতো আবেগ, অনুভূতি এবং স্বাভাবিক ভঙ্গিতে আলাপ করার দিকেও নজর রাখা হত।
বইয়ের খারাপ রিভিউ দিতে ভালো লাগে না, এই বইটিও শেষ পর্যন্ত হয়তো ভালো কিছু দেবে এই আশায় পুরোটাই পড়েছি মন দিয়ে। তবে হতাশা ছাড়া আর কিছু জুটল না। শুধু আশা করব লেখক এমন রিভিউ হয়তো নিজেও কখনও দেখবেন কোথাও, এবং ভবিষ্যতে আরও সুন্দর করে সাজিয়ে আমাদের উপহার দেবেন জমজমাট টানটান কোনো নতুন মিথলজিক্যাল অ্যাকশন থ্রিলার।
আপাতত আমার ব্যক্তিগত রেটিং: 3/10
আরো পড়ুন হারানোর পথে পাখির কলকাকলি ছোট গল্প: মায়ের চিঠি দেশলাইয়ের বাক্স ধারাবাহিক গল্প মামলাণু (১ম পর্ব) ধারাবাহিক গল্প মামলাণু ২য় পর্ব ধারাবাহিক গল্প মামলাণু শেষ পর্ব চিত্তরঞ্জন দেবভূতি এর শীতের কবিতা রাজযোটক - সুমিতা চৌধুরীর গল্প সুশান্ত সেন এর কবিতা মালভূমি, একদিন ও অস্থির মুস্তাক আহমেদ এর মধ্যবিত্ত শিরোনামে কবিতা টিনটিনের কৌটো কবিতা সমগ্র ১ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৩ নিয়ে অন্যবাংলা’র বিশেষ সংখ্যা সাপ্তাহিক কবিতা সমগ্র ২
আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন আমাদের টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত হন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজ এ যুক্ত হন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল এ যুক্ত হন