গোয়েন্দা গল্প প্রতিহিংসা

গোয়েন্দা গল্প প্রতিহিংসা

গোয়েন্দা গল্প প্রতিহিংসা

অন্যবাংলায় আজকে প্রকাশিত হলো ডাঃ হর্ষময় মণ্ডল এর প্রতিহিংসা শিরোনামে ১ টি চমৎকার গোয়েন্দা গল্প । আপনারা এই প্রতিহিংসা গোয়েন্দা গল্পটি পড়ুন ও আপনাদের মতামত জানান।

শিরোনাম – প্রতিহিংসা
কলমে – ডাঃ হর্ষময় মণ্ডল

প্রথম ভাগ

দুর্গাপুর শহরে অভিজাত এলাকায় একজন মারা গেছে ফোনটা পাওয়ার পরেই পুলিশ ইন্সপেক্টর দুলাল চ্যাটার্জি তদন্তে গেছেন। বাড়ির দেওয়ালে নেমপ্লেট ও প্রতিবেশীদের কাছ থেকে দুলালবাবু জানতে পারলেন যিনি মারা গেছেন তার নাম বিপুল অধিকারী। এক ছেলে গুড্ডু, মেয়ে শম্পা বৃদ্ধা মা কমলা। বিপুলবাবু বচ্ছর দুই হল বাড়ি করেছেন। না, এর থেকে বেশি কিছু তথ্য পেলেন না দুলালবাবু। কারণ বিপুলবাবুর বাড়ির লোক এত শোকগ্রস্ত যে কোন কথাই জিজ্ঞাসা করা যাচ্ছে না। কনস্টেবলরা খুঁজে পেতে খবর দিল সন্দেহজনক কিছুই পাওয়া গেল না। তাই বাধ্য হয়ে মোবাইল বার করে নম্বর মেলালেন ৯৪৩৪২৫০ —– হ্যালো আপনি কোথায়– ও দুর্গাপুরেই আছেন — একবার আসতে পারবেন—আসতে পারবেন!বেশ বেশ —- হাঁ ঠিকানা বলছি- দুর্গাপুরের বিধান নগর মালকোষ সরণী ২৭২ নম্বর বাড়ি।
আধ ঘন্টার মধ্যে প্রাইভেট ডিটেকটিভ ভাস্কর তালুকদার এসে পৌঁছালেন। ভাস্কর তালুকদার ছয় ফুটের উপর দীর্ঘ কায়া মেদ হীন শরীর হাতের কব্জি বেশ মোটা, পাঞ্জা চওড়া আঙ্গুলগুলো বেশ মোটা। বুড়ো আঙ্গুলের নখ কেজি পাঁচেক কাতলা মাছের মাছের মতো দেখলে মনে হয় দু- দশ জনকে তিনি একাই হার মানিয়ে দেবেন ।চোখ কোঠরাগত ,কিন্তু দীপ্তিতে ভরা, শ্যেম দৃষ্টি। বয়স আন্দাজ করা কঠিন।
দুলালবাবু ব্যস্ত হয়ে ভাস্করবাবুকে বললেন – আসুন আসুন ভাস্করবাবু।
—- ভাস্করবাবু বললেন – ভিতরে ঢোকার আগে বাইরেটা ভালো করে দেখে নিই। দেখলেন বাড়িটি দোতলা ।বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার বা ঢোকার তিনটি রাস্তা দুটো রাস্তা দুপাশের পিচ রোডের উপর অপর রাস্তা দিয়ে দুটো বাড়ির পাঁচিলের মধ্যখানে যেখানে নোংরা আবর্জনা ফেলা হয় ও বললেন আছে ।আন্দাজ কাঁঠা পাঁচেক জায়গার উপর বাড়িটি বানানো হয়েছে। বাইরেটা দেখে নেওয়ার পর বললেন – চলুন ভিতরে। আগে বাড়ির সব রুম দেখবো তারপর লাশ। বাড়ির সব রুম দেখলেন নিচের তোলার দুটি রুম অর বড়সড়ো ডাইনিংরুম। রুমের সামনে টয়লেটে।
সিঁড়ি দিয়ে উপরে ডাইনিং হল ও বেডরুম ও সংলগ্ন টয়লেট ও রান্নাঘর। প্রত্যেকটি ঘর বেশ পরিপাটি করে সাজানো দামী দামী আসবাবপত্র দিয়ে ।দেখলে বোঝা যায় বেশ অর্থবান লোকের বাড়ি ।বাড়ির লোকেদের দেখলেন কোন কথা না বলে লাশের কাছে এলেন নিচের তলার ড্রয়িং রুমে। বাইরের থেকে এ রুমে ঢুকেই উপরে উঠতে হয় ।উপরে ওঠার অন্য রাস্তা আছে ।যাই হোক ভাস্কর বাবু লাশের কাছে এলেন দেখলেন লাশ পড়ে আছে সোফার উপর একটা হাত ঝুলছে অন্য হাতটি বুকের উপর। কোথাও কোন রক্তপাত হয়নি, ভস্তাধস্তির চিহ্ন নেই। ভাস্করবাবু খুব বড় একটা পাওয়ারফুল আতস কাঁচ পকেট থেকে বার করে পর্যবেক্ষণ করলেন ।মেঝে দরজা সোফা লাশের সারা শরীর্। যেখানে বিপুলের মাথাটা আছে সেখানে সুপার ফাঁকে একটা বোতাম দেখতে পেলেন ,বোতামটি কাগজের টুকরো দিয়ে তুলে পকেটে রাখলেন ।তারপর বললেন মনে হয় আজ বাড়ির লোকেদের সাথে কথা বলা হবে না চলুন, ফেরা যাক দুলালবাবু।
—— হ্যাঁ ঠিক বলেছেন ভাস্করবাবু বিপুলবাবু স্ত্রী, মা ক্ষণে ক্ষণে অচৈতন্য হয়ে পড়ছেন। ছেলে মেয়েটা কেঁদেই চলেছে ।তাই আজ আর কিছু জিজ্ঞাস না করাই ভালো চলুন।
—- চলুন ,লাশটাকে পোস্টমর্টেমে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন আর যেখানে মারা গেছেন সেই রুমটি সিল করে দিন।

ডাক্তারবাবু পোস্টমর্টেমের রিপোর্টটি ভালো করে পড়ে বললেন – এ কি করে সম্ভব দুলালবাবু!
শ্বাসরোধ হয়ে মারা গেছে ,রিপোর্ট ঠিক আছে?
—- হ্যাঁ । আমারও তাই ধারণা হার্টফেল করে মারা গেছে। ন’টা থেকে সাড়ে ন’টার মধ্যে।
— হার্টফেল!ঠিক আছে, বাড়ির লোকের স্টেটমেন্টের পরেই বোঝা যাবে ।চলুন বিপুল অধিকারীর বাড়ি।

২য় ভাগ

ভদ্রমহিলা একটু সামলে উঠেছেন বলে মনে হলো। একজন মধ্যবয়স্ক ভদ্রলোক বাড়ির সকলের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। তার আগের দিনেই নাম জানা হয়ে গেছে আজকে সম্পর্ক জানা হলো ।
—- দুলাল চ্যাটার্জি বললেন – আমি অরবিন্দ থানার বড়বাবু আর ইনি বিখ্যাত প্রাইভেট ডিটেকটিভ ভাস্কর তালুকদার।
—– যে ভদ্রলোক পরিচয় করিয়েছিলেন তাকে ভাস্করবাবু জিজ্ঞাসা করলেন আপনার পরিচয়? —- আমি অজিত দত্ত, আমার বাল্যবন্ধু ছিল বিপুল ।সেই সূত্রে এই বাড়িতে আমার অবাধ যাতায়াত। সুখে দুঃখে আমরা একে অপরের পাশে দাঁড়াই।
—- ভাস্করবাবু পম্পাকে জিজ্ঞাসা করলেন – বিপুল বাবু খুন হয়েছেন কি করে বুঝলেন?
— খুন হয়েছে কই সে কথা তো আমরা বলিনি কোথাও রক্তের দাগ নেই ঘরে কোনরকম ধস্তাধস্তি চিহ্ন নেই তাহলে কি করে বলবো আমরা যে খুন হয়েছে? আশ্চর্য হয়ে পম্পা কথাগুলো বললেন।
—- দুলালবাবু বললেন তাহলে পুলিশকে ফোন করে বললেন কেন যে একজন খুন হয়ে গেছে! —- ফোন !ফোন তো আমরা করিনি।
—- তাহলে আমরা খবর পেলাম কি করে? অজিত বাবু বললেন।
— খবরটা আমি দিয়েছিলাম বড়বাবু দুলালবাবু বললেন।
—- আপনি! আপনি দিয়েছিলেন? আপনি কি করে জানলেন যে খুন হয়েছে?
—- না আমি সেরকম ভাবে বলিনি আসলে আমি সন্ধ্যাবেলা তো গল্প করে গেলাম অথচ সেই মানুষটা হঠাৎ মারা গেল বাড়ির কেউ জানতে পারলো না অথচ কোন রোগ ছিল না। তাই আমার মনে হল এটা খুন হতে পারে ।
—- ভাস্করবাবু বললেন – ব্যাস কেবল ওইটুকু ভেবেই?
—- না, গলায় একটা সরু কালশিটে দাগ ছিল- দুলালবাবু বললেন।
— গলায় কালশিটে দাগ? কি যা তা বলছেন? জানেন পোস্টমর্টেমের রিপোর্টে বলা হয়েছে হার্ট ফেল ।তারপর ভাস্করবাবুর দিকে জিজ্ঞাসুর দৃষ্টিতে তাকালেন।
—– ভাস্করবাবু বললেন – অজিতবাবু ঠিকই বলেছেন ।
—– কিন্তু আমি তো কিছু দেখতে পাইনি ভাস্কর বাবু ।
— আর কথা না বাড়িয়ে পম্পাকে জিজ্ঞাসা করলেন ভাস্করবাবু – আচ্ছা বলুন তো? কখন জানতে পারলেন যে আপনার স্বামী মারা গেছেন? —— কাজের মাসি আছে সকাল সাতটায়, ওকে দরজা খুলে দিতে গিয়ে দেখি ।
—- আপনি প্রথমেই বুঝে গিয়েছিলেন মারা গেছে?
—- না দরজা খুলতে গিয়ে দেখি সোফায় শুয়ে আছে। কিছু না বলে দরজা খুলে দিয়ে ফিরে এসে আমি ডাকলাম ওঠার জন্য।
—– আপনার মনে হয়নি সোফাতে কেন?
—- না ।কারণ অনেকবার কাজ সারতে সারতে বেশি রাত হয়ে গেলে সোফায় শুয়ে পড়ে। কিন্তু অন্য দিন সকাল সাতটার আগেই ঘুম থেকে উঠে যায় সেদিন উঠেনি দেখে ভাবলাম শরীর খারাপ হলো নাকি! যখন ডাকার পরও উঠলো না তখন গায়ে হাত দিয়ে দেখি গা ঠান্ডা, বুকে কান পেতে দেখি হাত চলছে না, নাকের কাছে আঙুল নিয়ে দেখি শ্বাস পড়ছে না, তখন আমি চিৎকার করে কেঁদে উঠি ।আমার কান্না শুনে ছেলে, মেয়ে, মা সবাই এসে কান্না শুরু করে দেয়। অজিতবাবু তো পাশের বাড়ির, উনিও সাথে সাথে এসে পড়েন পরে পাড়ার লোক জমায়েত হয় ।
—- ভাস্করবাবু বললেন – আপনার স্বামী কি করতেন পম্পাদেবী।
—– ব্যবসা।
—– কি ব্যবসা?
—– সে ব্যাপারে কোনদিন কিছু বলেনি। তবে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যবসা করতেন বলে আমার ধারণা ।
——- ব্যবসা সংক্রান্ত ব্যাপারে নিশ্চয়ই অনেক লোক আসতেন?
—— হ্যাঁ আসতেন। তবে অধিকাংশ লোককে আমরা চিনি না কারণ যারা দেখা করতে আসতেন তারা ড্রয়িংরুমে নিচের তলায় বসতেন ।আর আমরা থাকতাম উপরে। সেই সময় আমরা ড্রয়িং রুম দিয়ে আসা-যাওয়া করতাম না আমার স্বামীর বারণ ছিল ওই সময় গ্যারেজের কাছের সিঁড়ি
ব্যবহার করতাম।
—- কাউকেই চেনেন না?
—- বললাম তো কয়েকজনকে চিনি। আসলে যারা দেখা করতে বাড়িতে আসতেন তাঁরা উনার মোবাইলে ফোন করে আসতেন ।
—- ভাস্করবাবু কিছুক্ষণ ঝুম মেরে বসে থেকে আবার বললেন – আচ্ছা সেদিন কে কে এসেছিলেন?
—- সেদিন কেউ আসেননি।
—– ভালো করে মনে করে দেখুন?
—– অজিতবাবু বললেন – আমি এসেছিলাম। —–আপনি কতক্ষণ পর্যন্ত ছিলেন?
—- সময় তো ঠিক বলতে পারবো না
তবে ন’টা হবে।
—-বিপুলবাবুর ছেলে গুড্ডু বলল – আমি টিউশন থেকে ফিরে ড্রয়িং রুম হয়ে সিড়ি দিয়ে উপরে চলে এলাম তখন শুনতে পেলাম বাবার সাথে গিয়ে কথা বলছিল।
—– দুলালবাবু বললেন- বাইরের লোক থাকলে তো তোমরা ড্রয়িং রুমে যাতায়াত করো না?
—- আমি বুঝতে পারিনি তাই কে কথা বলছে তাও দেখিনি।
—- কোন উত্তেজিত কথাবার্তা শুনতে পাওনি?
—– গুড্ডু বলল – না ।
—– দুলালবাবু অজিতবাবুকে বললেন – আপনি তো ন’টা পর্যন্ত ছিলেন? তারপর গুড্ডুকে বললেন গুড্ডু তুমি কখন টিউশন থেকে ফিরেছিলে? —-আমার টিউশন সাড়ে আটটায় শেষ হয় তারপর বাড়ি আসতে যেটুকু সময় লাগে।
—- তার মানে সেই সময় অজিতবাবু ছিলেন। আর বিপুলবাবুর মৃত্যু হয়েছে রাত ন’টা থেকে সাড়ে ন’টার মধ্যে।
—- ভাস্করবাবু বললেন – পম্পা দেবী আপনার স্বামী কি ওই দিন ওই সময়ে একবারও উপরে এসেছিলেন?
—–পুম্পা ভালো করে মনে করে বললেন – হ্যাঁ এসেছিলেন কয়েকটা কাগজ আলমারিতে রেখে মনে হল কিছু টাকা নিয়ে গেলেন আর বললেন তোমরা খেয়ে শুয়ে পড়ো আমার রাত হবে আমার খাবার ঢাকা দিয়ে রেখে দেবে।
—- হুম । পম্পা দেবী কাগজগুলো দেখাতে পারেন ?
—– দেখছি বলে পম্পা উঠে গেলেন।
—— গুড্ডুকে প্রশ্ন করলেন ভাস্করবাবু তোমার বাবা কোন নেশা করতেন?
—- আমি কখনো দেখিনি ।
—– কমলা বললেন – না আমার ছেলে নেশা করত না তবে বাইরের লোক এলে তাদের সঙ্গ দিতে একটু আধটু মদ খেতে দেখেছি কিন্তু কখনোই মাতাল হয়নি।
পম্পা কাগজগুলো নিয়ে এসে ভাস্করবাবুর হাতে দিলেন।
—— ভাস্করবাবু কাগজগুলো উল্টে পাল্টে ভালো করে দেখে বললেন – এ তো এলআইসিআইয়ের কাগজ! তবে যেদিন মারা গেছেন সেদিনের নয় অন্য তারিখে লেখা হয়েছে। স্কিম করা হয়েছে অন্তত দশ লাখ পাবে পরিবার। এজেন্টের নাম রুদ্র প্রতাপ চৌধুরী। এলআইসিআই অফিসে ক্লেম করলে দশ লাখ টাকার মত পাবেন আমি দেখছি যত তাড়াতাড়ি টাকাটা পান তার ব্যবস্থা করব আমার উপর ভরসা রাখতে পারেন।
—— কমলা দেবী কাঁদতে কাঁদতে বললেন – ছেলেটাই চলে গেল তো টাকা নিয়ে কি করব? —– দুলালবাবু অজিতবাবুকে জিজ্ঞাসা করলেন – আপনি কি এলআইসিআই করেন?
—- না।
—- রুদ্র প্রতাপ চৌধুরীকে চেনেন?
—- না ।
—– দেখুন খুনটা হয়েছে যে সময় সে সময়ে আপনি ছাড়া আর কেউ ছিল না তাই সেই সন্দেহের বশবর্তী হয়ে আমরা আপনাকে অ্যারেস্ট করছি।
দুলালবাবু ভাস্করবাবু সবার কাছে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন অজিতবাবুকে নিয়ে ।
পম্পা দেবীর ও কমলা দেবীর অজিত বাবুকে না নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে কোনো অনুরোধই রাখলেন না।

See also  প্রবন্ধ প্রকৃত জীবন

৩য় ভাগ

রুদ্র প্রতাপ চৌধুরীর বাড়ি খুঁজে পেতে ভাস্করবাবুকে খুব বেশি পেতে হলো। দুর্গাপুরের রায়ডাঙ্গায় একদম শেষ প্রান্তের জোলা জমিতে একটি ছোট্ট বাড়ি এক চিলতে উঠোন । কাঠা দুই জমির উপর বাড়িটি মনে হলো। বাড়ির বাইরেটা প্লাস্টার হয়নি। দরজার কাছে নাম ধরে ডাকতেই বেরিয়ে এলো এক যুবক। বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি হবে। নিরীহ গো বেচারা সাধারণ চেহারা। পরনে সস্তা জামা প্যান্ট ।
—- ভাস্করবাবুর সামনে এসে বললেন – আমি রুদ্র প্রতাপ চৌধুরী।
—- ভাস্করবাবু নিজের পরিচয় দিলেন।
—- রুদ্র প্রতাপ বললেন – বলুন কি জানতে চান? —– বাড়িতে কে কে আছেন?
—– আমার বৃদ্ধ বাবা, মা স্ত্রী ও এক ছেলে। ছেলে কলেজে পড়ে।
—– ভাস্করবাবু বললেন – আপনি কি জানেন আপনার পলিসি হোল্ডার বিপুল অধিকারী কয়েকদিন হল মারা গেছেন?
—- সে কি আশ্চর্য হয়ে গেলেন রুদ্রবাবু। —-আশ্চর্যকর হলেও এটাই সত্য। তাই বলছিলাম ওনার টাকা পাওয়ার ব্যবস্থা তো করতে হবে।
—- নিশ্চয় নিশ্চয়ই তা তো করতেই হবে ওটা আমার দায়িত্ব। এটাই আমার সুখ্যাতি যে, টাকা পাওয়ার ব্যাপারে যা ঝক্কি ঝামেলা সব আমি নিয়ে টাকা নিজে গিয়ে পৌঁছে দিই পলিসি হোল্ডারের বাড়িতে ।
—- এই কাগজগুলো দেখুন তো।
—— কাগজগুলো নিয়ে রুদ্র বাবু দেখে বললেন ঠিক আছে আজই আমি যা যা করণীয় করে দেব যাতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব টাকাটা পায়।
—- ধন্যবাদ কাগজগুলো রাখুন। আপনার কোন ফোন নাম্বার আছে?
দেখছেন তো বাড়ির অবস্থা সংসার চালাতে হেমশিম খাচ্ছি ফোন কি করে কিনবো?
—- তাহলে এই কাগজে আপনার ঠিকানাটা লিখে দিন যাতে আর খুঁজতে অসুবিধা না হয়। —- আর অসুবিধা হবে কেন আপনি তো খুঁজে নিয়েই এসেছেন।
—— তা ঠিক তবে এদিক ওদিক ঘুরে ঘুরে এসেছি তো রাস্তা ভুলে গেছি নির্দিষ্ট ডাইরেকশন থাকলে রিস্কাওয়ালা কে বললে ঠিক পৌঁছে দেবে। —– রুদ্ধবাবুর ঠিকানা লেখা কাগজ নিয়ে বিদায় নিলেন ভাস্করবাবু।

See also  চিত্তরঞ্জন দেবভূতি এর শীতের কবিতা

পম্পাদেবীর কাছ থেকে বিপুলবাবুর কয়েকটা বন্ধুর ঠিকানা নিয়ে তাদের বাড়ি গিয়ে খোঁজ করেছেন ভাস্করবাবু ,না কোন ক্লু পান নি। তাহলে কি খুন নয় স্বাভাবিক মৃত্যু এ ব্যাপারে ভাস্করবাবু কথা বলছিলেন দুলালবাবুর সঙ্গে।
দুলালবাবু বক্তব্য এটা খুন নয় নিজে কথাটা বলেই আবার বললেন তাও মানা যাচ্ছে না কারণ খুনটা হয়েছে নটা থেকে সাড়ে নটার মধ্যে। আপনিও গলায় দাগ দেখেছেন অজিতবাবুও দেখেছেন অথচ —– কথার মাঝখানের তড়াক্ করে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লেন ভাস্করবাবু ফোনে কল হতেই। হ্যালো—–।
—- কি হলো উঠে পড়লেন?
—– আর একজন ব্যবসায়ী খুন হয়েছে এই একইভাবে। তার ঘরে যেতে হবে ।
— আপনি কোন সূত্র পেলেন ?
— যদি আমার ধারণা মিলে যায় তাহলে খুনি কেউ ধরে ফেলেছি বলতে পারেন কথা বলতে বলতে দ্রুত পদক্ষেপে বেরিয়ে গেলেন।

আর একজন যিনি খুন হয়েছিলেন তিনি সুসান আগরওয়াল তার বাড়ি থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে খোশ মেজাজে সোজা অরবিন্দ থানায় ঢুকে ভাস্করবাবু বললেন – দুলালবাবু চারজন কনস্টেবল নিয়ে চলুন রুদ্র প্রতাপ চৌধুরী র বাড়ি।
আধঘন্টার মধ্যে রুদ্রবাবু বাড়িতে আছে কিনা জিজ্ঞাসা করাতেই রুদ্র বাবুর বাবা-মা স্ত্রী হাউ হাউ করে কাঁদতে শুরু করে দিলেন।
— রুদ্রবাবুর বাবা অমল বাবু বললেন- রুদ্র আজ তিনদিন বাড়ি আসেনি তিনদিন আগে এলআইসিআই অফিস যাচ্ছি বলে সেই যে গেল আর ফিরল না। তারপর এই চিঠি।
—– চিঠিটি ভাস্করবাবু খুলে দেখলেন। মুক্তিপণ বাবদ পঞ্চাশ হাজার টাকা আজই ডিসি সিনেমাহলের কাছে নিয়ে আসবেন নইলে ছেলের লাশ পাবেন ।
চিঠিটা পড়া হতেই সবাই কান্না জুড়ে দিল।
—- অমলবাবু বললেন- কোথায় পাবো এত টাকা!
—-আপনারা নিশ্চিন্তে থাকুন আজ বিকেল পাঁচটা নাগাদ অরবিন্দ থানায় আসুন সেখানে আপনার ছেলেকে পাবেন ।
ভাস্করবাবু ও দুলালবাবু বেরিয়ে পড়লেন অমল বাবুর বাড়ি থেকে ।যেতে যেতে দুলালবাবু বললেন – খুনি আর কেউ নয়, ওই অজিত শালাই খুনি। চলুন থার্ড ডিগ্রি চার্জ করব সব বলে দেবে তাহলে আর সমস্যা কোথায়?
—– ড্রাইভার জানতে চাইলো কোথায় যাব?
—- ভাস্করবাবু বললেন সিটি সেন্টার ।
——দুলালবাবু বললেন – ডিসি না ভাস্করবাবু? —– পকেট থেকে একটা স্কেচ বার করে ড্রাইভারকে বললো এই প্যাটার্নের বাড়ি খুঁজতে যেখানে এইরকম বাড়ি দেখতে পাবে সেখানেই দাঁড়াবে।
প্রায় দুই ঘণ্টা খোঁজার পর ওইরকম বাড়ি পাওয়া গেল। প্রাসাদওপম বাড়ি প্রায় দীঘা খানেক জায়গা নিয়ে বানানো ।সামনে জলের ফোয়ারা ফুলের বাগান অপূর্ব সৌন্দর্যমন্ডিত।
—— দুলালবাবু আশ্চর্য হয়ে বললেন – এখানে কাকে ধরার জন্য এলেন ভাস্করবাবু ?
—- কোন কথা না বলে গেট পেরিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেলেন।নক্ করলেন কেউ দরজা খুললো না। বেল বাজালেন একবার দুবার তিনবার বাজাতে দরজা খুলে গেল । কিন্তু কেউ কোথাও নেই।
—- ভাস্করবাবু হুংকার ছাড়লেন বেরিয়ে আসুন আপনার খেল খতম। আমরা তৈরি হয়েই এসেছি কোনরকম চালাকি করার চেষ্টা করবেন না।
যে ঘর থেকে বেরিয়ে এল তাকে দেখে দুলালবাবু অবাক।
—- ভাস্করবাবু বললেন এরেস্ট করুন দুলালবাবু।

অজিত বাবুকেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ঠিক পাঁচটার সময় রুদ্র প্রতাপ এর বাবা অরবিন্দ থানায় হাজির ভাস্কর বাবু বললেন আসুন অমল বাবু ওই দেখুন আপনার ছেলে আমার ছেলে লো কাঁপে কেন কারণ আপনার ছেলে অপরাধী দুনিয়ায় এমন কোন অপরাধ নেই যেখানে যাতায়াত নেই ও একটি অ্যান্টি সোশ্যাল বাংলার খুনি সবকিছু
কি বলছেন আপনি যদি তাই হবে তাহলে আমরা ওইটুকু ঘরে এতগুলো মানুষ দরিদ্রতার সাথে লড়াই করে আছে কেন
ওই ঘর এলআইসিআই এজেন্ট এই সব কিছু পুলিশের চোখে ফাঁকি দেওয়ার জন্য বিশ্বাস হচ্ছে না তো, নিজের ছেলের মুখে শুনুন। খুব ঝানু গলায় কথাটা বললেন দুলাল বাবু। তারপর একজন কনস্টেবল কাদেস্ট দিলেন রুদ্রকে বার করে আনতে
রুদ্র বাবু বসতে বলে ভাস্কর বাবু বললেন বলুন রুদ্র বাবু নিজের অপরাধ স্বীকার করুন নইলে থার্ড ডিগ্রি চার্জ করতে বাধ্য হব বুদ্ধ পদার্থ চিৎকার করে বলল হা হা আমি আন্টি সোশাল স্মার্টলার খুনি কেন হলেন কেন হব না যখন আমরা খেতে পেতাম না খুব গরিব বাবার স্থায়ী কোন রোজগার ছিল না তখন ওই কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়নি আমরা তিন ভাইবোন দুই দিদি তারপর আমি অন্যায় হয়ে ঘুরছি সামান্য কাজের আশায় সেই সময় দিদি একটা চাকরি পায়। সামান্য মাইনে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ডিউটি তাও মেনে নিচ্ছিল কিন্তু যে সংস্থার দিদি চাকরি করছিল সেই সংস্থার মালিক ও তার বন্ধু দিদিকে রেপ করে
আমরা ঘটনাটা পুলিশকে জানায়নি কারণ আমরা গরিব ছবিটার পাবোনা অথচ দিদির বদনাম রোটে যাবে বিয়ে দেওয়া দায় হবে কিন্তু নিরবে মেনে নিলে কি হবে দিদি প্রেগন্যান্ট হয়ে গেল যেদিকে ওয়াস করিয়ে খেটে খাওয়া ছেলে দেখে দিদির বিয়ে দিয়ে দিলাম তার বদলে যেদিন ননদকে আমি বিয়ে করলাম
একই সংসারে অচল রোজকার নেই তার উপর স্ত্রী কাজের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছি, নিজের উপর হতাশা ঘৃণায় এসে যাচ্ছে। বাবা মা স্ত্রী দিদি কারোর মুখের দিকে তাকাতে পারছি না ভাবলাম কুলিগিরি করব তাই দুর্গাপুর প্ল্যাটফর্মে বসে আছি এমন সময় দেখলাম বোম্বে মেল থেকে এক ভদ্রলোক নামছেন। খুব ভিড় ওই ভদ্রলোকের পকেট থেকে একটি ছেলে মানি ব্যাগ নিয়ে নিল আমি তাকে পুলিশে ধরিয়ে না দিলে না দিয়ে তাকে বললাম আমি পকেট মারি শিখব তারপর থেকে ধীরে ধীরে অপরাধ জগতের সবাইকে চিনলাম এই যে দুর্গাপুর এলাকার ডন খুব কেয়ারের লোক হলাম বুঝলাম এ জীবিত থাকলে আমি ডন হতে পারব না তাই তাকে খুব নিপুণতার সাথে ছড়িয়ে দিলাম পৃথিবীতে তারপর আমি হলাম ডন আর ছদ্মবেশ নিলাম এলআইসিআই এজেন্ট হিসাবে ঘরের অবস্থা খুব দিনদর করে রাখলাম যাতে বাড়ির লোকেরা পর্যন্ত সন্দেহ করতে না পারে আমি কে
সে তো হলো কিন্তু ওদের খুন করলেন কেন কারণ ওই যে দুজনকে খুন করেছি তারা আমার দিদিকে রেপ করেছিল ভাস্কর বাবু বললেন আপনি মৃত ব্যক্তিদের এলআইসিআই করতে গেলেন কেন কেননা আমি জানি খিদা কি বাড়ির রোজ কেড়ে ব্যক্তি মরে গেলে অর্থ কষ্ট হয় যার ফলে সংসার ভেসে যায় তাই যাতে সংসার ভেসে না যায় খেয়ে পড়ে বাঁচতে পারে তাই
দুলাল বাবু বললেন ভাস্কর বাবু আপনি কি করে বুঝলেন যে খুনি রুদ্র প্রধান বা ওই ঘরে রুদ্ধ প্রতাপ কে পাওয়া যাবে ভাস্করবাবু একটা সিগারেট ধরিয়ে লম্বা একটা টান দিয়ে বললেন আপনার মনে আছে বিপুল বাবুর বাড়িতে একটা জামার বোতাম পেয়েছিলাম হ্যাঁ মনে আছে ওই বোতামে যে আঙ্গুলের ছাপ ছিল সেই সাপের সঙ্গে মিল ছিল এলআইসিআই কাগজে এবং রুদ্ধ প্রতাপ আমাকে যে ঠিকানা দিয়েছিল তার আঙ্গুলের ছাপ ও ছিল একই আগারওয়াল যে খুন হয়েছিল তার ওই এলআইসিআই করা হয়েছে কিন্তু সেই কাগজের ফিঙ্গারপ্রিন্ট আলাদা এজেন্ট কিন্তু রুদ্রপোতা। এজেন্ট সম্বন্ধে জিজ্ঞাস করতে বলল কম বয়সী একটি ছেলে আমি দু বিধায় পড়ে গেলাম আবার ভাবলাম খুনি নিজেকে বাঁচাবার জন্য হয়তো অন্যের সাহায্য নিয়েছে আমার ভাবনা মিলে গেল। সব থেকে রুদ্ধ প্রতাপ যেটা ভুল করেছে তা হল নিজের বাবার কাছে মুক্তিপণ চেয়ে পঞ্চাশ হাজার টাকা দাবি

See also  ধারাবাহিক গল্প মামলাণু শেষ পর্ব

যুদ্ধ প্রতাপ কি এমন বিখ্যাত যে তাকে লোক অপহরণ করবে এখানে আমার খুনি সম্বন্ধে ধারনা একেবারে দৃঢ় হল। ওই চিঠিতে কি রুদ্র প্রতাবের আঙুলের ছাপ ছিল
না ওটাতো সাধারণ ব্যাপার অপরকে দিয়ে লিখিয়ে পাঠিয়েছে রুদ্র খুব সন্তর্পণে অত্যন্ত বলিষ্ঠ পদক্ষেপে কাজ করেছিল কিন্তু শেষ রক্ষা করতে পারল না রুদ্ধ প্রতাপ পোস্টমর্টেম এর রিপোর্ট বদল করেছিল আসল পোস্টমর্টেম এর রিপোর্ট এই দেখুন এতে লেখা আছে গলায় কাপড় দিয়ে শ্বাস রোদ করে মারা হয়েছে আমার মনে হয় গলায় স্পঞ্জের প্যাড দিয়ে তাদের সিল্কের কাপড় জড়িয়ে খুন করা হয় কি রুদ্র প্রদান ঠিক বলছি তো রুদ্ধ প্রতাপ ঘার নারে অর্থাৎ ঠিক বলছেন
দুলাল বাবু আপনি জানতে চাইছিলেন কি করে জানলাম ঐ বাড়িতে রুদ্ধ প্রতাপ কে পাওয়া যাবে শুনুন রুদ্ধ প্রতাপের বাড়িতে গিয়ে দেখলাম একটা বাড়ির সিনারি দেওয়ালে টাঙানো তাও আবার ওয়েল পেন্টিং যাদের এত অভাব তাদের বাড়িতে এত খরচ করে এত সুন্দর বাড়ির ছবি কিভাবে থাকতে পারে আমি ওই সিনারি মনে করে একটা স্কেচ বানাই। কিন্তু কোথাও এই বাড়ি পাব ঠিক তারপরেই অপহরণের টাকা দুর্গাপুর ডিসি হলে সামনে দিতে বলেছে আমি আন্দাজ করলাম ওই বাড়ি সিটি সেন্টারেই হবে আমার ধারণা সত্যি হলো খুনি যতই চালাক হোক তার একটা না একটা চিহ্ন ফেলে যাবে কেবল সেই চিহ্ন কে চেনার লোক চাই অমল বাবু বললেন রুদ্র তোর এত প্রথম খিদা মান অপমান অভাব দরিদ্রতা সব নিয়ে তো জীবন এদের হাতে নিয়ে বাঁচতে হয়। যারা রেপ করেছিল তাদের বিরুদ্ধে নালিশ জানিয়ে তো আমি প্রশাসন আইনের কাছে সাহায্য চাইনি লোক লজ্জা লজ্জার ভয়ে দোষ তো কারো নয় দোষ আমাদের আর একটা কথা। যারা রেপ করেছিল তাদের সাথে তোর কি তফাৎ আমি সারা জীবন অভাবের সাথে লড়াই করেছি তবু অসৎ পথ অবলম্বন করিনি ইন্সপেক্টর গোয়েন্দা বাবু আপনার যা দেখবেন এর এমন শাস্তি হয় যাতে বাইরের আলো দেখতে না পায় কারণ বাইরে এলে না জানে আর কি অঘটন ঘটাবে
অমল বাবু একবারও রুদ্র প্রতাপ এর দিকে না তাকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে পুলিশ স্টেশন থেকে বাইরে পা রাখলেন দেখলেন থানার বাইরে বসে একটা ভিখারি ভিক্ষা করছে স্বচ্ছ নীল করজ্জল আকাশের নিচে।
—-০০০—