চিড়া কি? চিড়া খাওয়ার উপকারিতা | What is best flattened rice

সরাসরি ধান থেকে তৈরি একটি ধরন হচ্ছে চিড়া। ভারতীয় উপমহাদেশে একে মূলত ভাতের বিকল্প হিসেবে খাওয়া যায়। বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের এটি খুব পরিচিত খাবার। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে চিড়াকে বিভিন্ন নামে ডাকে। যেমন-হিন্দিতে পোহা বা পাউয়া, কন্নড় ভাষায় আভালাক্কী, গুজরাটিতে পাউয়া, রাজস্থানি ভাষায় পোয়া, তামিলে আভাল বলা হয়। বাংলাদেশের সীমান্ত কিছু এলাকায় একে চিড়ি বলে।

চিড়া কি
চিড়া কি

চিড়ার বিভিন্ন নাম

পৌয়া  – গুজরাটি,
পোয়া – রাজস্থানী
চুড়া – ওড়িয়া
আতুকুলু – তেলুগু
আভাল – তামিল ও মালায়ালম
চিউরা – বিহার ও ঝাড়খণ্ড,
চিঁড়া – বাংলা ও আসামি,
চিউড়া – মৈথিলি, নেপালি, ভোজপুরি ও ছত্রিশগঢ়,
পোহা বা পাউয়া – হিন্দি
বাজি – নেওয়ারি
পোহে – মারাঠি
ফোভু – কোঙ্কানি
আভালাক্কি – কন্নড

মূলত এটি একটি নিরামিষ খাবার। যেহেতু দেখতে চ্যাপ্টা, চাপ দিয়ে ধান চ্যাপ্টা করা হয়, তাই একে ইংরেজিতে বিটেন রাইস বা ফ্লাটেন্ড রাইস বলা হয়।

চিড়া তৈরিতে ধান চার থেকে পাঁচ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে সামান্য ভেজে ঢেঁকিতে কুটলে তৈরি হয়ে যায়। ইদানীং মেশিনেই ভাঙানো হয়। তবে মেশিন থেকে ঢেঁকিতে তৈরি চিড়া অধিক সুস্বাদু হয়।

তাছাড়া চিড়া চালের থেকে হালকা ও সহজে বহনযোগ্য। তাই এটি চালের থেকে বেশিদিন ঘরে রাখা যায়। প্রায় সব ধরনের ধান থেকে চিড়া তৈরি হয়। তবে এক্ষেত্রে স্বাদের কিছু তারতম্য পরিলক্ষিত হয়। যেমন সালকেলি নামে এক ধরনের ধান থেকে লালচে ও সুস্বাদু চিড়া তৈরি হয়। যা সুস্বাদু চিড়া হিসেবে পরিগনিত হয়। ফলে অনাদিকাল থেকেই চিড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে সব ভাষাভাষী-জাতি-ধর্ম- নির্বিশেষে সবার একটি সর্বজনীন খাদ্য।

যে চিড়া খেয়েছিলেন ইংল্যান্ডের রাণী

বাংলার একটি ঐতিহ্যবাহী চিড়া হচ্ছে ‘ধনীর চিড়া’। যে চিড়ার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল সুদূর ইংল্যান্ডসহ সারা বিশ্বে। যার স্বাদ আর গন্ধ জয় করেছিল ব্রিটিশ রানি ভিক্টোরিয়ার মন। গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার সূত্রাপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত ‘বারবাড়ীয়া’ গ্রামের শ্রী দুর্লভ সরকারের সহধর্মিণী শ্রীমতী ধনী রানি সরকার এ চিড়ার আবিষ্কারক ।

See also  Bard Ai ব্যবহার করার উপায়

চিড়ার রকম ফের

শিশু, যুবক, বয়স্ক সবাই খেতে পারে। চিড়া খুব সহজে পানি, দুধ, গুড়ের রস এবং অন্যান্য তরলজাতীয় পদার্থ শুষে নিতে পারে। শুকনো চিড়া গুড়ের পাটালি দিয়েও খাওয়ার রীতি আছে। কয়েকমুঠো চিড়ে আর একটুকরো পাটালিগুড় দিয়ে আরামসে ১ বেলা পার করে দেয়া যায়। পথশ্রান্ত ক্ষুধার্ত পথিক পথিমধ্যে গাছের ছায়ায় বসে জঠরজ্বালা নিবারন করতো এটা দিয়ে। এটা যেহেতু সহজেই হজম হয়ে যায়। তাই ক্ষুধার জ্বালা মিটতো ও সহজে। এছাড়াও মিষ্টির দোকানগুলোতে দই-চিড়া বহুল প্রচলিত খাবার। গ্রামবাংলায় মিষ্টির দোকানে ঢুকলেই এটা দেখতে পাওয়া যায়।

ডায়রিয়া ও আমাশয়ে চিড়া ভেজানো পানি খুবই উপকারী। দূরের যাত্রায় অথবা হাতের কাছে কোনো খাবার না থাকলে চিড়া বহন করা যেমন সুবিধা, খাওয়াও সহজ। কারণ এতে জ্বালানির কোনো প্রয়োজন হয় না। এছাড়াও চিড়া ভেজালে প্রায় চার গুণ বেড়ে যায়। যেমন- ২০ গ্রাম চিড়া ভেজানোর পর প্রায় ৮০ গ্রাম ওজন হয়। সব বয়সে এবং সবখানে বসে খাওয়া যায়।

চিড়ার উপকারিতা

চিড়া যেমন সহজলভ্য খাবার। তেমনি এর নানাবিধ উপকারিতা ও বিদ্যমান। চলুন জেনে নেই চিড়ার কিছু উপকারিতা।

চিড় খেলে পেট ঠান্ডা থাকে,
ডায়রিয়া আমাশয় রোগীর জন্য ভেজা চিড়া উপকারী।
চিড়া সম্পূর্ণ চর্বিমুক্ত।
চিড়ায় কোনো গ্লটেন নেই। তাই অ্যালার্জি এর ও ভয় নেই।
চিড়া ভিটামিন বি সরবারহ করে।
কিডনির সমস্যা থাকলে চিড়া হতে পারে উৎকৃষ্ট খাবার।
চিড়া সহজপাচ্য।
চালভিত্তিক হওয়ায় এর থেকে তাৎক্ষণিক শকৃতি ও পাওয়া যায়।
এটি বেশিদিন সংরক্ষণ করে রাখা যায়।

চিড়ার অপকারিতা

প্রতিটা জিনিসেরই উপকারের পাশাপাশি অপকারিতা বিদ্যমান। তদ্রূপ চিড়া এত উপকারীতা সত্ত্বেও এটি অপকারিতা মুক্ত নয়। চিড়ার ও স্বল্প পরিমাণে অপকারিতা রয়েছে।
বেশি পরিমাণে চিড়া গ্রহণে অনেক সময় সিরাম ট্রাইগ্লিসারাইডের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়। যা কোলেস্টেরল এর মাত্রা হ্রাস করে এবং কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিসের কারণ হতে পারে। তাই কোনোরূপ সমস্যা দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া বাঞ্ছনীয়।

চিড়া কি ওজন কমায়?

চিড়াতে কোনো ফ্যাট বিদ্যমান নেই। তাই এটি খেলে শরীরে ফ্যাট জমার ও কোনো সুযোগ থাকে না। তাই যাদের অতিরিক্ত ওজন নিয়ে সমস্যা রয়েছে তারা চিড়া খেতে পারেন।

দই চিড়া খাওয়ার উপকারিতা


চিড়াতে সোডিয়াম ও পটাশিয়াম এর পরিমান কম। তাই এটি কিডনি রোগীর কোনো ক্ষতি করে না। আর দইতে রয়েছে প্রোবায়োটিক। যা আমাদের অন্ত্রের ক্ষতিকর ব্যকটেরিয়া ধ্বংস করে। তাই দই চিড়া মিক্স করে খাওয়া যেতে পারে।

ভেজা চিড়ার উপকারিতা

চিড়াতে আঁশের পরিমান নেই বললেই চলে। ফলে এটি ডায়রিয়া, ক্রন’স ডিজিজ, আলসারেটিভ কোলাইটিস, অন্ত্রের প্রদাহ এবং ডাইভারটিকুলাইসিস রোগ এর প্রতিরোধে মোক্ষম ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও কিডনির জন্য ও উপকারী। তাই ভেজা চিড়াও খাওয়া যেতে পারে।

চিড়ার পুষ্টি উপাদান

চিড়ার পুষ্টিগুণ বেশ চমৎকার। চলুন জেনে নেয়া যাক প্রতি ১০০ গ্রাম চিড়ায় কি কি উপাদান রয়েছে। এতে আছে ৩৪৬ ক্যালরি, ৬.৬ গ্রাম আমিষ, ৭৭.৩ গ্রাম শর্করা, ২.০২ মিলিগ্রাম লোহা, ২৩৮ মিলিগ্রাম ফসফরাস রয়েছে।

চিড়া যেভাবে খাবেন / চিড়া ভেজানোর নিয়ম

শুকনো বা ভেজা দুই অবস্থায়ই চিড়া খাওয়া যায়।
প্রথমে চিড়াকে সাধারণ পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে এরপর বারকয়েক ভালেভাবে ধুয়ে নিতে হবে। তারপর দুধ, কলা, লবণ চিনি সহযোগে খাওয়া যায়। সাথে চাইলে দুধের বদলে দই ও ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া আম দিয়েও খাওয়া যায়।

Leave a Comment