\

ধারাবাহিক গল্প মামলাণু (১ম পর্ব)

ধারাবাহিক গল্প মামলাণু (১ম পর্ব)

অন্যবাংলায় প্রকাশিত হচ্ছে রাজিত বন্দোপাধ্যায় এর ধারাবাহিক গল্প মামলাণু। আজ থাকছে এই ধারাবাহিক গল্প মামলাণু এর ১ম পর্ব। আপনার এই ধারাবাহিক গল্পটি পড়ুন ও আপনাদের মতামত জানান।

ধারাবাহিক গল্প মামলাণু ২য় পর্ব

মামলাণু (১ম পর্ব)
রাজিত বন্দোপাধ্যায়
মামলাণু
মামলাণু

মেস বাড়ির অফিসে বসে মেস ম্যানেজার অনিমেষ ভড় মশাইয়ের সঙ্গে আড্ডা দিতে দিতে হঠাৎ জানালা দিয়ে নজরে পড়ল , রাস্তা দিয়ে দূর থেকে এক ব্যক্তি রাস্তার দুপাশের বাড়ি ঘরের দিকে তাকিয়ে কিছু যেন খুঁজতে খুঁজতে এদিকে এগিয়ে আসছেন । একটু আগেই দোকান পাট ছাড়িয়ে এসেছেন , অতএব তাঁর খোঁজার বস্তু দোকান নয় । এখন অফিস টফিসও ছাড়িয়ে ধীরে ধীরে এগুচ্ছেন । আমার বাঁ পাশের দেয়ালের জানালা দিয়ে আমাদের এই রাস্তাটার অনেকটাই দৃশ্য । আমি ভড় মশাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম তিনিও লোকটিকে লক্ষ্য কোরছেন । তাই মৃদু হেসে বললাম ,

— আমার বিশ্বাস উনি এই মেস বাড়িটাই খুঁজছেন ভড় মশাই ।
ম্যানেজার অনিমেষ ভড় মুচকে হেসে বললেন ,
— আপনি মাথা থেকে রহস্য অনুসন্ধানের ভূতটা ঝেড়ে ফেলুন মশাই । হুট করে মশাই আনন্দবাজারের ব্যক্তিগত কলমে বিজ্ঞাপন দিয়ে বসলেন ! একটা পাতি কেসও তো এলনা মশাই । আপনার দ্বারা কিসস্যু হবে না । কথাটার খানিকটা হলেও সত্যি । বিজ্ঞাপনের কোন সাড়া এখনও পাইনি । দু সপ্তাহ হয়ে গেল !

ভড় মশাই মাথা নেড়ে বললেন ,
— আরে বাবা এ হল কোলকাতা । এটা ন্যু ইয়র্ক নয় । এখানে গাঁটের কড়ি খরচ করে কেউ কথায় কথায় প্রাইভেট ডিডেকটিভ নিয়োগ করে নাকি !
— আসতে পারি ?
আমাদের দুজনকে চমকে দিয়ে হঠাৎ খোলা দরজার ওপাশে রাস্তার ফুটপাত থেকে কথাটা ভেসে এল । চেয়ে দেখি রাস্তা দিয়ে আসতে থাকা সেই ভদ্রলোকটি । আমি থ বনে যাওয়া ভড় মশাইয়ের ছানাবড়া চোখের দিকে একটা তির্যক দৃষ্টি হেনে , মুচকি হেসে বললাম ,
— আসুন ।

See also  অণুগল্প পেত্নির সঙ্গে প্রেম

ভদ্রলোকটির বয়স পঞ্চাশের উপর । মাথায় সাদা কালো ঘন চুল , পরনে ক্রীম রঙের জীনস আর লাল চন্দন রঙের টী শার্ট টা তাঁর ফর্সা রঙটা কে আরো উজ্জ্বল করে তুলেছে । চোখে সোনালী ফ্রেমের প্রোগ্রেসিভ লেন্সের চশমা । এক কথায় তাঁর আপদমস্তক দিয়ে যে ছটা বেরুচ্ছে তাকেই বুঝি বলে আভিজাত্য । তিনি এগিয়ে এসে ভড় মশাইয়ের টেবিলের সামনে দাঁড়ালেন । দ্বিধান্বিত গভীর স্বরে শুধালেন ,
— আপনি কি মেসের ম্যানেজার ?
ভড় মশাই একটা ডোগ গিলে মাথা নাড়লেন । উনি পকেট থেকে একটা খবর কাগজের টুকরো বার করলেন ।
— এটা কি আপনার মেস থেকে দেওয়া হয়েছে খবরের কাগজে ?


আমি ঝুঁকে পড়ে দেখলাম টুকরোটা আনন্দবাজারের ; ব্যক্তিগত কলমে বেরানো আমার বিজ্ঞাপনঃ আপনার যে কোন বিষয়ে অনুসন্ধানের জন্য যোগাযোগ করুন : – জিৎ বন্দোপাধ্যায় , প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর , কুহেলি মেস , ২১/১ সার্পেন্টাইন লেন , লেবুতলা , কোলকাতা — ১২ । ভড় মশাই মাথা নেড়ে আমাকে দেখিয়ে বললেন ,
— ইনি হলেন জিৎ বন্দোপাধ্যায় ।
উনি আমার দিকে চেয়ে স্মিত হাস্য সহকারে বললেন ,
— ইয়ে , নমস্কার , আপনি যে এতটা ইয়ং সেটা বুঝিনি । তবে আমার কাজ চলে গেলেই হল ।
বলেই উনি নিজের শার্টের পকেট থেকে একটা হলদে খাম বের করে তার ভিতর থেকে একটা সাদাকালো ফটো বের করে আমার হাতে দিলেন । দেখলাম , অনেকটা উনার মতো দেখতে এক বছর ছাব্বিশ সাতাইশ বছরের ছেলের ফটো ।

আমি ভদ্রলোকের মুখের দিকে চাইতে বললেন ,
— আমার একমাত্র ছেলে । আজ থেকে দশ বছর আগে হঠাৎই কিছু না বলে , উধাও হয়ে যায় । এত দিনেও তার কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি ।
— পুলিশ …
— রিপোর্ট লিখিয়ে ছিলাম । নিজে যতটা পারি খোঁজ খবর করেছি , কিন্তু কোন ট্রেস পাইনি । তারপর শরীর খারাপ হল , রিটায়ার করলাম । এখন তেমন একটা দৌড়াতে পারিনা । তবে এই খোঁজ খবরের জন্য আমি যে কোন খরচ বহন করতে রাজি মিঃ ব্যানার্জি ।

See also  সাপ্তাহিক কবিতা সমগ্র ৩

— হুম , তা আপনার নাম টা …
— এই দেখুন নিজের পরিচয়টা দিতেই ভুলে গিয়েছি । আমার নাম হরিনারায়ন চট্টোপাধ্যায় । আমি ব্যাঙ্কে কাজ করতাম । এস বি আই , মৌলালিতে । থাকি ক্রীক রো – তে । ছেলের নাম কৌশিক । হ্যামিলটন ফিনান্সে কাজ করত । ঠিকানা টা …
একটু ভেবে নিয়ে বললেন ,
— ২৩/৩ লেলিণ সরণী । আপনার ফীস কত আমি জানিনা । তবে খোঁজ খবরের জন্য বিস্তর ঘোরাঘুরি আছে , তাই সঙ্গে একটা দশ হাজারের চেক আমি নিয়ে এসেছি । আপনার সঠিক স্পেলিংয়ে নামটা বলুন লিখে দি । বলে প্যান্টের পকেট থেকে বের করে আমার সামনে মেলে ধরলেন চেক বইটা ।

লেখা হলে আমি সেটা নিয়ে প্রশ্ন করলাম ,
— আপনার ছেলের বন্ধু বান্ধবদের কারুকে চেনেন ?
উনি মাথা নাড়লেন । আমি মৃদু হেসে বললাম ,
— আমি কি কাল কোন এক সময়ে আপনার বাড়ি যেতে পারি ?
উনি বললেন ,
— এনি টাইম , য়ূ আর মোস্ট ওয়েলকাম ।
ভদ্রলোক তাঁর ক্লান্ত চরণ টেনে ফুটপাতে পা রাখতেই ভড় মশাই বললেন ,
— পাতি কেস !
— কেন মনে হচ্ছে বলুন তো ?

— আরে মশাই ভদ্রলোকের মধ্যে কোন চাড় নেই দেখলেন না ! মনে হয় তেমন ভাবে খোঁজ করেন নি । তদন্তে নেমে হয় তো দেখবেন , লিলুয়ায় যেয়ে বসে আছে ।
আমি মৃদু হেসে বললাম ,
— হুম! তাহলে বলেছেন এটা ফেলুদার ভাষায় একটা অণু মামলা , — মানে মামলাণু , তাই তো ?
— তবু তো শুরুটা হল মশাই । যা হোক , আমায় একটু সঙ্গে রাখুন , কেসটা বেশ ইন্টারেস্টিং লাগছে ।
— রাখতে পারি , তবে পরীক্ষায় পাশ করতে হবে ।
— বেশ ।

অন্যবাংলা অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
আরো পড়ুন

হারানোর পথে পাখির কলকাকলি
ছোট গল্প: মায়ের চিঠি
দেশলাইয়ের বাক্স
ধারাবাহিক গল্প মামলাণু ২য় পর্ব
আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত হন
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হন
আমাদের ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হন
আমাদের ফেসবুক পেজ এ যুক্ত হন

Leave a Comment