সুমিত মুখার্জীর গল্প অতৃপ্ত আত্মার কাহিনী
অন্যবাংলায় আজকে প্রকাশিত হলো সুমিত মুখার্জী এর অতৃপ্ত আত্মার কাহিনী শিরোনামে ১ টি চমৎকার গল্প। আপনারা এই অতৃপ্ত আত্মার কাহিনী গল্পটি পড়ুন ও আপনাদের মতামত জানান।

শিরোনাম: অতৃপ্ত আত্মার কাহিনী
কলমে: সুমিত মুখার্জী
সন্ধ্যে বেলা ট্রেনে চড়েছি উদ্দেশ্য দার্জিলিং এর পাহাড় ভ্রমন। ট্রেনের এক কামরায় আমি একাই ছিলাম। আশে পাশে খুব কম লোকই আছে তাই পুরো কামরা ফাকা। এসি ট্রেন, তাই আমার কামরার দরজা বন্ধ রাখতে হল। ধীরে ধীরে সন্ধ্যে পেরিয়ে রাত নেমে এল। আমি কিছু বুঝতে পারিনি কারন সারাক্ষন ল্যাপটপ নিয়েই একটু ঘাটাঘাটি করছিলাম। হঠাৎ দরজায় কড়া আওয়াজ এল “ঠক ঠক “। আমি ভাবলাম টিটি বোধ হয় এলো। দরজা খুলতে দেখলাম, না টিটি নয় একটা মেয়ে গায়ে সাদা শাল জড়িয়ে ভিতরে এল। শালটা দিয়ে মুখ ঢাকা।
আমি বললাম,
কি চাই? এটা আমার কামরা ও, ভিতরে আসুন
ধন্যবাদ, মেয়েটি ভিতরে প্রবেশ করলো। আমি দরজা আবার আটকে দিলাম, একটু বিব্রত লাগছিল। আমি আমার জায়গায় গিয়ে বসে আবার ল্যাপটপ ঘাটতে লাগলাম, মেয়েটার দিকে আমার লক্ষ্য নেই। কিছুক্ষন পর মেয়েটা নিজে থেকেই জিজ্ঞাসা করে উঠলো,
আপনার নাম কি?
সুমিত আর আপনার?
আরিয়সী।
ও, সুন্দর নাম
কি লাভ! মানুষ ই যখন নেই নামের সৌন্দর্যে কি আসে যায়!
মানে? আমি ঠিক বুঝলাম না!
না কিছু না, আপনি কি করেন?
-আমি একজন ইঞ্জিনিয়ার,আর লেখক এই দুটোই আমার কাজ
আপনি?
-কিছুই না। (গম্ভির গলায়) আপনি
কোথায় যাবেন?
-এই দার্জিলিং যাব একটু ঘুরতে, পাহাড় দেখব, আপনিও কি সেখানেই যাচ্ছেন নাকি?
হ্যা, প্রতিদিন ই যাই।
-আপনি কি ট্রেনেই থাকেন? (কেন বললাম নিজেও জানি না)
না, তবে যাতায়াত করি এই কামরা দিয়েই।
ও আচ্ছা (কিছু না করেও কেউ কেন প্রতিদিন দার্জিলিং-শিয়ালদহ যাওয়া আসা করে বুঝলাম না)।
আপনি এখন মারা গেলে কান্না করার জন্য কেউ কী থাকবে?
(এমন কথায় বেশ ঘাবড়ে গেলাম কি বলছে মেয়েটা )
-কি আবল তাবল বলছেন আপনি।
মেয়েটা একটা হাসি দিয়ে বলল, বেশ ঘাবড়ে গেছেন দেখছি! ভয় পাবেন
না, আমি আপনাকে মারব না, আপনাকে আমার ভাল লেগেছে।
(মনে মনে বললাম, মাথা খারাপ বোধ হয়, ধুর শুধু শুধু ভয় পাইয়ে দিল)
আপনি কি আমার সঙ্গে মজা করছেন? মেয়েটি আমার কথা গ্রাহ্যই না করে বলল, জানেন, এই কামরায় ৩ সপ্তাহ আগে আমি শিয়ালদহ থেকে বাড়িতে মানে দার্জিলিং ফিরছিলাম। সেদিন বিশ্ববিদ্যালয় সপ্তাহের শেষ এসাইনমেন্ট জমা দেওয়ার দিন ছিল, এসাইনমেন্ট জমা দিয়ে বেরোতে বেরোতে বিকেল হয়ে গেল। পরের দিন ছিল আমার দাদার বিয়ে তাই আজ যে করে হোক বাড়ি যেতেই হবে। তাই এই ট্রেনে উঠতে হয়েছিল। এই কামরাতেই সিট পড়েছিল, তখন কামরাটায় আমি ছিলাম, আর একটা আমার বয়সী মেয়ে ছিল, আর চারটা ছেলে ছিল।
আমি পাশে আরেকটা মেয়ে পেয়ে মোটামুটি সাহস পেয়েছিলাম। কিন্তু সেই মেয়েটিই ছিল আমার কাল। ট্রেন চলতে শুরু করার কিছুক্ষনের মধ্যেই হঠাৎ ছেলেগুলো আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। আমি চিৎকার করতে চাইলাম, কিন্তু ওই মেয়েটি এসে আমার মুখ ওর ওড়না দিয়ে বেঁধে দিল, আমার ওরনা দিয়ে হাতদুটো বাঁধলো। আমি অনেক ধস্তাধস্তি করলাম, কিন্তু পাঁচ জনের শক্তির কাছে আমি পারলাম না। আমাকে ওরা ট্রেনের সিটে ফেলে দিল তারপর একে একে চারজন মিলে ধ*র্ষন করলো আমাকে সারারাত। আর সাথে সঙ্গী হিসেবে যোগ দিয়েছিল আর উস্কেও দিয়েছিল ওই মেয়েটি, তারপর…
আমি এতক্ষন মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনছিলাম,
হঠাৎ থেমে যাওয়ায় বললাম,
তারপর?
তারপর আর কি, ঠিক যখন ভোর হবে হবে ঠিক সেই সময় ওদের মধ্যে মেয়েটি বলল,
একে বাঁচিয়ে রাখা ঠিক হবে না মেরে ফেল। তারপর ওদের মধ্যে থেকে একটা ছেলে আমার গলা একটা ছুরি দিয়ে কেটে ফেলল।
শেষের কথায় আমার সারা শরীর শিউরে উঠলো, বললাম, ম ম ম মানে?
আপনার সিটটা উঁচু করে দেখুন!
আমি এবার ভয় পেয়ে গেলাম, ভয়ে ভয়ে সিটটা তুলতেই লাফিয়ে পিছনে এলাম। একটা পচা লাশ! পচে গন্ধ বের হয়ে গেল পুরো ঘর। পচা গন্ধে আমার বমি উঠে আসতে লাগলো। পকেট থেকে
রুমাল বের করে নাকে চেপে পিছনে তাকালাম, একি? মেয়েটা কোথায় গেল? দরজা বন্ধ, জানালার খোলার প্রশ্নই আসে না, তাহলে কোথায় গেল মেয়েটা? আমি দরজা খুলে “টিটি” বলে দৌড় দিলাম ট্রেন এর সামনের দিকে।

আরো পড়ুন হারানোর পথে পাখির কলকাকলি ছোট গল্প: মায়ের চিঠি দেশলাইয়ের বাক্স ধারাবাহিক গল্প মামলাণু (১ম পর্ব) ধারাবাহিক গল্প মামলাণু ২য় পর্ব ধারাবাহিক গল্প মামলাণু শেষ পর্ব চিত্তরঞ্জন দেবভূতি এর শীতের কবিতা রাজযোটক - সুমিতা চৌধুরীর গল্প সুশান্ত সেন এর কবিতা মালভূমি, একদিন ও অস্থির মুস্তাক আহমেদ এর মধ্যবিত্ত শিরোনামে কবিতা টিনটিনের কৌটো কবিতা সমগ্র ১ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৩ নিয়ে অন্যবাংলা’র বিশেষ সংখ্যা সাপ্তাহিক কবিতা সমগ্র ২ শাশ্বত ধর এর সম্ভবামী যুগে যুগে বই পর্যালোচনা
আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন আমাদের টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত হন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজ এ যুক্ত হন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল এ যুক্ত হন