রাজযোটক – সুমিতা চৌধুরীর গল্প

সুমিতা চৌধুরীর গল্প রাজযোটক

অন্যবাংলায় আজ প্রকাশিত হলো সুমিতা চৌধুরী এর গল্প রাজযোটক । আপনারা এই রাজযোটক গল্পটি পড়ুন ও আপনাদের মতামত জানান।

রাজযোটক
রাজযোটক
গল্প- রাজযোটক
কলমে: সুমিতা চৌধুরী 

“থাকহরি এলাটার নামকরা ঘটক। বিয়ের যুগ্যি যেকোনো মেয়ে আর ছেলেকে কথার জাদুতে এমন উপযুক্ত আর নানা গুণে গুণান্বিতা করে ছাড়তো সে, যে দুপক্ষ‌ই ভাবতো এমন একখানা রত্ন হাতছাড়া হয়ে গেলে সারা জীবনের জন্য আফসোসের ব্যাপার হবে।

তা এই থাকহরি সবে চা খেয়ে বাজারে বেরোচ্ছে, এমন সময় এক কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা এসে হাজির। তিনি এর আগে দুজন ঘটক ধরেও মেয়ের বিয়ের কোন সুরাহা করতে পারেননি। অবশেষে থাকহরির কাছে এসেছেন,” আপনাকে একটা ব্যবস্থা করে দিতেই হবে ঘটকদা, মেয়ের বয়স নয় নয় করে ৩৫ হবে এই আশ্বিনে।” “অ, তাই? কোনো চিন্তা করবেন না, এই থাকহরির কাছে যখন একবার এসে পড়েছেন, তখন নিশ্চিন্তে বাড়ি যান। মেয়ের ঠিকুজি কুষ্টি ছবি টবি যা এনেছেন দিয়ে যান। বাকীটা আমি দেখে নেবো। এই আশ্বিনে মায়ের বোধনের সঙ্গে সঙ্গেই আপনার মেয়ের বিয়ের বোধনও হয়ে যাবে। প্রস্তুত হোন।”

কানু মিত্তিরের ছোটো ছেলের সঙ্গে এই মেয়ের ঘটকালিটা পাকা করতে হবে মনে মনে ফেঁদেই থাকহরি তাদের বাড়ি গেল। “আরে থাকহরি যে, এসো এসো। তোমার কথাই ভাবছিলাম।” “আজ্ঞে, বড়ো ছেলের পাত্রী খুঁজছেন শুনলাম। তা এবার সানাই বাজানোর প্রস্তুতি নিন। মেয়ে এক্কেবারে যেমনটি আপনারা চাইছিলেন, তেমনটিই খবর নিয়ে এসেছি এটুকু বলতে পারি। বৌদির এবার আরামের দিন এলো বলে। বড় বৌ এসে সব কাজকর্ম সামাল দিতে পারবে। সংসারের সব কাজে পটু। সেবা টেবায়ও খুব মতি, গুরুজনদের মাথায় করে রাখে। এই তো চাই নাকি একটা সংসারের উপযুক্ত বড় বৌ হিসেবে।

বয়সটা এই আশ্বিনে ৩৫ হবে বটে, তবে সেটাও দরকার। একদম কচি বয়স হলে বুঝলেন না, উঠতি বয়সের হাওয়ায় উড়ু উড়ু মন হবে, সংসারে টিকবে না। বড় বৌ হিসেবে তো চলবেই না। ছেলের বয়সের ধারে কাছে হলে দুজনের বনিবনাও বেশী হবে, একে অপরকে বুঝবে। আর সবথেকে বড়ো কথা সাংসারিক অভিজ্ঞতায় সংসারকে ভালোওবাসবে আর বেঁধেও রাখবে পুরো পরিবারকে। এই তো চাই, কি বলেন? সুন্দরের চটক তো দুদিন বই তো নয়, আর তার ঝক্কিও কম নয়, সবই তো বোঝেন। এ মেয়ে সংসারী, লক্ষ্মীমন্ত, একদম আপনাদের পরিবারের উপযুক্ত। আদর্শ বড়ো বৌমা হওয়ায় সব গুণই আছে।

See also  ধারাবাহিক গল্প মামলাণু (১ম পর্ব)

আরো দশ জায়গা থেকে সম্বন্ধ আসছে। আমি তাই তড়িঘড়ি আপনাদের খবর পাওয়া মাত্র আপনাদের বলতে চলে এলাম। যাতে পাছে না এমন রাজযোটক জোড় মাঠে মারা যায়, তাই। এবার আপনারা যা বলেন।” মিত্তিরগিন্নী এমন উপযুক্ত বড় বৌমার গুণগান শুনে তড়িঘড়ি বলে বসলেন,” না না, থাকহরি বাবু, আপনি ওদের বলুন সামনের সপ্তাহেই আমরা দেখতে যাবো। আর কথাবার্তা বলে দেখে ঠিক মনে হলে একেবারে পাকা কথাই দিয়ে আসবো। যা দিনকাল পড়েছে, তাতে এখন সংসারী কাজে পটু, সেবা টেবা জানে এমন বৌ পাওয়াই তো দুষ্কর। আপনি কথা বলে রাখুন আগেভাগেই।”

থাকহরি হাসিমুখে নিজেকে মনে মনে তারিফ করতে করতে পৌঁছাল রামলাল গুপ্তর বাড়ি। “কই রামবাবু, বলি বিয়ের কথা পাকা হলো বলে,জল মিষ্টির ব্যবস্থা পাকা করুন।” রামবাবু হাতে চাঁদ পাওয়ার মতো হতবাক হয়ে আনন্দের আতিশয্যে থাকহরির হাত দুটো ধরে বললেন,” বলেন কি? সত্যি নাকি?” “তবে আর বলছি কি? সামনের সপ্তাহেই পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে। কথাবার্তা সব মনোমতো হলে ঐদিনই পাকা কথা বলে যাবেন। পাশের গ্রামের কানু মিত্তিরের বড়ো ছেলের সাথে আপনার মেয়ের সম্বন্ধ ঠিক করলাম। বড়ো শান্ত স্বভাবের ছেলে। একেবারে আপনার মেয়ের উপযুক্ত। বয়সটাও কাছাকাছি ৩৮, মিলমিশ ভালোই হবে।

এখন তো আবার আধুনিক যুগ,বন্ধুত্ব না হলে সংসার করা যায় না এখন আর। কাছাকাছি বয়স হলে বন্ধুত্বও তাড়াতাড়ি হবে। মায়ের আঁচলের তলা থেকে বেরিয়ে তাড়াতাড়ি বৌয়ের আঁচল ধরে সাবালক হতে পারবে। আর এতোদিনে আপনার মেয়ে সংসারের কাজ টাজ শিখে কিছুটা সংসারী তো নিশ্চয়ই হয়ে উঠেছে, তার সাথে অবসর মতো একটু মিত্তিরগিন্নীর সেবা টেবা করলেই একটু “মা মা” করলেই গিন্নিমার মন পেতেও অসুবিধা হবে না। আর বড় বৌ মানে সংসারের অর্ধেক কত্রী। আর ছেলেও ভালো ব্যবসাপাতি করে, রোজগার খুবই ভালো, রাণীর হালেই থাকতে পারবে বুদ্ধি করে চললে।

See also  গল্প মানবতা

ছেলে খুব বেশী সুন্দর হলে বাইরে মন হবে, অহংকার হবে, আর পাঁচজনের নজরেও পড়বে, ধরে রাখা দায়। তাই একটু ঘরোয়া হওয়াই ভালো। সেদিক দিয়ে দেখলে এ একেবারে রাজযোটক।” “সে আর বলতে। এখন ভালোয় ভালোয় চার হাত এক হলেই হয়। তারপর আপনাকে পেটপুরে মিষ্টি খাওয়াবো।”

অঘ্রাণে বিয়ের সানাই শুনতে শুনতে থাকহরি যখন শেষ পাতে দশটা রসগোল্লা নিয়ে বসেছে। তখন দেখা গেল দুই বেয়াই বেয়ানই থাকহরির খাওয়ার তদারকি করছেন প্রসন্ন মুখে।।

অন্যবাংলা অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
আরো পড়ুন

হারানোর পথে পাখির কলকাকলি
ছোট গল্প: মায়ের চিঠি
দেশলাইয়ের বাক্স
ধারাবাহিক গল্প মামলাণু (১ম পর্ব)
ধারাবাহিক গল্প মামলাণু ২য় পর্ব
ধারাবাহিক গল্প মামলাণু শেষ পর্ব
চিত্তরঞ্জন দেবভূতি এর শীতের কবিতা
আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত হন
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হন
আমাদের ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হন
আমাদের ফেসবুক পেজ এ যুক্ত হন